দ্বিতীয় দফার বন্যার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সিলেটের সাতটি উপজেলার অনেক জায়গা থেকে এখনো নামেনি বন্যার পানি। তাই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারেননি ২৫ সহস্রাধিক বন্যাদুর্গত মানুষ।
Advertisement
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য মতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জের অমসীদ ও বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সিলেটের বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে।
এ অবস্থায় সিলেটে দুদিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এরই সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাইও।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। বাড়ছে অভাব। পানি না নামায় কর্মসংস্থানেও সংকট দেখা দিয়েছে।
Advertisement
আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও কয়েক দিন এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকার পর বৃষ্টি নামতে পারে।
আবহাওয়া অফিস সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার সিলেটে সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পড়েছে। আর সর্বনিম্ন ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার রাতে বৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাতেও বেশ বৃষ্টি হয়েছে।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও দুপুরের প্রখর রোদে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। একটু প্রশান্তির আশায় মানুষকে গাছের ছায়ায় কিংবা শীতল কোনো স্থানে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে গরমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে ডাব, তরমুজ, শসার। এছাড়া কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমে জ্বর, ঠান্ডা, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীও বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে।
Advertisement
দক্ষিণ সুরমার গোপশহরের বাসিন্দা মুন্না মিয়া বলেন, ‘আমার ঘরে এখনো পানি, আর সড়কে তো হাঁটুপানি। বন্যা আসার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও দুর্ভোগ লাগব হচ্ছে না। আর এখন প্রচন্ড গরমের সঙ্গে আছে লোডশেডিংও।’
নগরের রিকশাচালক মুজিবুর রহমান (৩০) বলেন, সকাল থেকে প্রচন্ড গরম পড়ছে। রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে গাছের নিচে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার চালাই। সামনে ঈদ। অনেক খরচ, তাই বসেও থাকতে পারি না।
সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র আহসানুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, সিলেটে এখনো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫ হাজার ৫৭৯ জন আশ্রিত আছেন। তাদের বাড়িঘর থেকে এখনো পানি নামেনি। জেলায় মোট ৩১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র মঙ্গলবার পর্যন্ত চালু আছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বন্যায় সিলেট জেলায় এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি। ক্ষতিগ্রস্ত লোক প্রায় ৩০ লাখ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৪০ হাজার ৯১টি। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ প্রায় ৩ কোটি টাকা বন্যার্তদের বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও ভ্রম্যমাণ চিকিৎসা অব্যাহত আছে।
এদিকে সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের ৫ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের নগদ টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট সদর উপজেলার দলদলি চা বাগানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের নগদ ১০ হাজার টাকা করে দেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
ছামির মাহমুদ/এসজে/জেআইএম