এ বছর মসলার আমদানি ভালো হয়েছে। কিন্তু দেশে বন্যা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এর চাহিদা ছিল কম। ফলে এবার ঈদকেন্দ্রিক মসলার পাইকারি বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর হু হু করে দাম বাড়েনি মসলার। যদিও রাজধানীতে খুচরা দোকানে নানা অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সরেজমিনে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
Advertisement
তবে মসলার বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। তবে রসুন ও আদা ১০০-১৪০ টাকার মধ্যে মিলছে। আবার দেশি রসুন মিলছে ১০০ টাকার কমে। অন্যদিকে চীনের আমদানি করা বড় রসুন, যেগুলো সহজে খোসা ছাড়ানো যায় সেটা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা বাড়তি।
এদিকে মসলার বাজারে গত এক মাসে দামে খুব একটা হেরফের নেই। রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারে ভারতীয় জিরা বিক্রি হতে দেখা গেছে প্রতি কেজি ৩৬০-৩৮০ টাকায়। এছাড়া আফগানি জিরা ৪০০ টাকা কেজিতে মিলছে। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮০-৪০০ টাকা, ধনিয়া ১৬০-২০০, তেজপাতা ২২০-২৫০, গোলমরিচ ৭০০-৮০০, সাদাফল (এলাচ) ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ও লবঙ্গ ১ হাজার ৬০ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকায়।
এদিকে কোরবানি ঈদে আরও অনেক ধরনের মসলার চাহিদা থাকে। এর মধ্যে আলু বোখারা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে। জায়ফল প্রতি কেজি ৫৮০-৫৯০ এবং যৌত্রিক ২ হাজার ৩৮০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলার দাম গত একমাস এমনই রয়েছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দাম বাড়েনি। উল্টো জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচের দাম কমেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও হেদায়াত ব্রাদার্সের স্বত্ত্বাধিকারী হাজি এনায়েতুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, পাইকারিতে কোনো মসলার দাম বাড়েনি বরং কিছুটা কমেছে। অন্যান্য যে কোনো সময়ের ঈদের তুলনায় এ বছর বাজার স্থিতিশীল।
তিনি বলেন, অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে মসলার চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারে। মানুষ যেটুকু খরচ কমানোর চেষ্টা করছে, তার মধ্যে তেল-মসলার ব্যবহার কমানোর চেষ্টা রয়েছে।
এনায়েতুল্লাহ বলেন, যদিও এবার ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। সে কারণে মসলা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন বিপাকে।
Advertisement
এদিকে খুচরা বাজারে দেখা গেছে ক্রেতারা খুব কম পরিমাণেই নিচ্ছেন মসলা। বেশিরভাগ ক্রেতা ১০০-২০০ গ্রাম করে মসলা নিচ্ছেন।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম এলাচ ২৪০-২৫০ টাকা, গোলমরিচ ১০০-১১০, দারুচিনি ৫০-৫৫, লবঙ্গ ১৪০-১৫০, জিরা ৪৮-৫২, ধনিয়া ২০-২৫ ও তেজপাতা ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ অবস্থায় পাইকারি থেকে খুচরা দামের পার্থক্য অনেক বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, বেশিরভাগ মসলা ঈদ ছাড়া অন্য সময় বিক্রি কম হয়। কিন্তু বিনিয়োগ করতে হয় বেশি। নষ্টও হয়। তাই খুচরায় দাম একটু বেশি।
পাইকারির তুলনায় খুচরায় দামের পার্থক্য এতো বেশি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী শাহাজাহান বলেন, পাইকারি হিসাব করে খুচরায় বিক্রি করা যায় না। এক কেজি কেউ নিলে আমরাও দাম কমিয়ে রাখি।
অনেক খুচরা ব্যবসায়ী দাবি করেন, এক সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে মসলার দাম বাড়ছে। এর মধ্যে জিরার দামটাই বেশি। এছাড়া শুকনা মরিচ, ধনিয়া ও তেজপাতা রয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে এনায়েতুল্লাহ বলেন, এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নানা অজুহাতে তারা দাম বাড়ায়। অনেকে আবার ঈদ মৌসুমে শুধু মসলার ব্যবসা করে। বেশি লাভের সুযোগ নেই। সরকারের উচিত তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
এনএইচ/জেডএইচ/এএসএম