কোরআনে এসেছে, ‘ইক্বর কিতাবাক’। তোমার কিতাব অর্থাৎ তোমার আমলনামা তুমি পড়। মহান আল্লাহ হাশরের ময়দানে এ নির্দেশ দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার হিসাব তুমি করো, তুমি কিসের উপযুক্ত; জান্নাত না জাহান্নাম। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর হিসাব নেওয়ার আগে তুমি নিজে নিজের হিসাব নাও। তাইতো মুমিন মুসলমানের উচিত, হাশরের ময়দানে নিজের আমলনামার হিসাব দেওয়ার আগে দুনিয়ায় নিজ নিজ আমলের হিসাব নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা। নিজ নিজ আমলনামার অবস্থা কী?
Advertisement
হিজরি বছরের শেষ মাস জিলহজ। এ মাসটি বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে মুমিন মুসলমানের জীবন থেকে আরও একটি বছর বিদায় নেবে। বিগত বছরের আমলের হিসাব বের করার সময় এখনই। ইসলামি জীবন ব্যবস্থার আলোকে বছর অতিবাহিত হয়েছে কি?
ঈমান বিশুদ্ধ হয়েছে কি?
হিসাব করার বিষয় এটি যে গেল বছরের তুলনায় এবার নিজেদের ঈমান বাড়লো না কমলো, তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা বাড়লো না কমলো, তাকদিরের বিশ্বাসের উপর একিন/বিশ্বাস বাড়লো না কমলো ইত্যাদি।
Advertisement
সুন্নাত তরিকায় ইবাদত হয়েছে কি?
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাত তরিকায় হলো কি? নিজের চিন্তা-চেতনায় এগুলো আগের থেকে সুন্দর হলো কিনা সে হিসাব কতটুকু? কোরআন তেলাওয়াত আগের থেকে সহিহ হলো না ভুল। এ হিসাব নেওয়ার সময় এখনই।
রিজিক হালাল হচ্ছে কি?
বেঁচে থাকার তাগিদে যে জীবিকার পেছনে ছুটা হচ্ছে তা কি হালাল? নিজ নিজ কামাই রোযগারের ব্যাপারে আগের থেকে বেশি সচেতন কিনা। মুমিন মুসলমান নিজে কতটুকু যাঁচাই-বাঁছাই করে কামাই রোযগার করছে সে ব্যাপারে চিন্তা-ফিকির করা। খাতায় লিখে হিসাব রাখা। এ সবের প্রতিটিরই হিসাব দিতে হবে।
Advertisement
বান্দার হক আদায়ে সচেতন কি?
বান্দার হক আদায়ের ব্যাপারে গত বছরের তুলনায় এবার কতটুকু সচেতন। গতবারের তুলনায় এবার বেশি না কম; এ বিষয়ে নিজ নিজ আমলের হিসাব নেওয়া খুবই জরুরি।
আত্মশুদ্ধির অবস্থা কী?
নিজেদের জীবনে সচরাচর ৮-১০টা গুণ অর্জন হলো কি না। সবার সবর ও শোকর কতটুকু বেড়েছে সে হিসাব খুবই জরুরি। নিজ নিজ দিলের আত্মিক যেসব রোগ আছে, সেসব রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়ে কতটুকু অগ্রগামী। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, রাগ, মুনাফেকির মতো চারিত্রিক দোষ থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিজ নিজ দিলের অবস্থার হিসাব করা জরুরি।
সর্বোপরি দুনিয়ার জীবনে তাকাব্বুর দূর করা, কুদৃষ্টি দূর করা, অন্যের মেয়েকে বা বিবিকে দেখা তৃপ্তি অনুভব না করা, নাচ-গান করা বা দেখা বন্ধ করাসহ যাবতীয় গুনাহ বর্জন করার মাধ্যমে নিজেদের নফসকে পরিশুদ্ধ করার শপথ নেওয়া।
হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সতর্ক করেছেন, এই উম্মতের এক দল মানুষ সারারাত নাচ-গান করবে তারপর সকালে উঠে দেখবে কেউ শূকর, কেউ বানর হয়ে গেছে।
মনে রাখতে হবে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী কখনো মিথ্যা হবে না। তাই এখনই সময় নিজ নিজ আমলের হিসাব নেওয়া। পরকালে কল্যাণে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহর রহমতের আশা করা। তবে মুক্তি সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজ নিজ আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। হিসাব করে করে বদআমল থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস