তথ্যপ্রযুক্তি

ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পথে সরকার

২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এ পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে ২০১৪ সালে ফের ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে মহাজোট। এরই মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথেও একধাপ এগিয়েছে সরকার।

Advertisement

তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের বিকাশ এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি প্রসারের লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক ব্যবসায়িক ইনকিউবেটর তৈরি করেছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বুধবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে এটি। ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার পথে একটি বড় পদক্ষেপ- বলছে সরকার।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, চুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ একর (৪.৭ একর) জমির ওপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ছয় তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে- স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্নার, এক্সিবিশন/প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি। উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল রয়েছে।

Advertisement

এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্নার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন, নিজস্ব পার্কিং সুবিধাও থাকছে। অন্যদিকে মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক আটটি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের চার তলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি (একটি নারী ও একটি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া দুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শিগগির স্থাপিত হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্যোক্তা তৈরি এবং জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি গড়ে তুলতে বিশ্বের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর থাকলেও বাংলাদেশে তা এবারই প্রথম। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ-অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া হবে। এ ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হবে।

চুয়েটের এ উদ্যোগটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

বুধবার (৬ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর, চুয়েট’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টারে নির্মিত মাল্টিপারপাস হল, শেখ জামাল ডরমিটরি ও রোজী জামাল ডরমিটরির উদ্বোধনও করবেন।

Advertisement

বলা হচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়নে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মতো অবকাঠামো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর।

চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পরিচালক এবং চুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম মশিউল হক জাগো নিউজকে বলেন, এ আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। উদ্যোক্তা এবং ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ ইকো-সিস্টেম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পগুলোকে কীভাবে বাস্তব প্রকল্প এবং পণ্যে রূপ দেওয়া যায় আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে ২২০ জনের প্রশিক্ষণ তথা ইনকিউবেশনের সুযোগ রয়েছে। চুয়েটের এ প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ ধরনের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করবে সরকার। কারণ, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ গ্র্যাজুয়েট বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়। এদের মধ্যে অনেকেই থিসিস, রিসার্চ বা ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের উদ্ভাবনী আইডিয়া জমা দেন। এর মধ্যে থেকে যেসব থিসিস, রিসার্চ কি ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলোর অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে সেগুলো বাণিজ্যিকীকরণে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ইউনিবেটর প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে।

এসইউজে/এমকেআর/এমএস