খেলাধুলা

তিন পেসারের বদলে স্পিনার বেশি নেওয়াই কি ভালো নয়?

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ক্যারিবীয়দের উত্তাল উইলোবাজি থামাতে বাংলাদেশ কি তিনজন পেসার নিয়ে মাঠে নামার মতো দল হয়েছে? হোক তা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে- ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ কি তিন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে খেলে প্রতিপক্ষকে বধ করার সামর্থ্য রাখে?

Advertisement

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব পেছনে যেতে হবে না। ডমিনিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের দিকে তাকালেই জানা যাবে উত্তর। যে কেউ বলবেন, নাহ! এখনও তিনজন জেনুইন পেসার খেলানোর মতো অবস্থা হয়নি বাংলাদেশের। তাতে শুধু বোলিং শক্তিই কমে না, সামগ্রিকভাবে টিম বাংলাদেশের শক্তির ভারসাম্যও যায় কমে।

রোববার বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবীয়রা ২০ ওভারে করেছে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান। যেখানে তিন পেসার তাসকিন আহমেদ (৪৬), মোস্তাফিজুর রহমান (৩৭) ও শরিফুল ইসলাম (৪০) মিলে ১১ ওভারে দিয়েছেন ১২৩ রান। পেসারদের ওভারে গড়পড়তা ১১.১৮ রান করে তুলেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটাররা।

অথচ তিন স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান (৪ ওভারে ১/৩১), সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে (১/৩৮) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (১ ওভারে ০/১) মিলে বাকি ৯ ওভারে দিয়েছেন ৭০ রান। তাদের বোলিংয়ে ওভারপ্রতি উঠেছে ৭.৭৭ করে। এখানেই পরিষ্কার পেসারদের অবস্থান।

Advertisement

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, একটি ম্যাচের চালচিত্র দেখেই চূড়ান্ত মন্তব্য করা কেন? তাদের জন্য জবাব, পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানাচ্ছে বাংলাদেশের পেসারদের চেয়ে স্পিনারদের সাফল্য অনেক বেশি। ম্যাচ পিছু উইকেট শিকারকে সাফল্যের মানদণ্ড ধরলে দুই বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ ও শরিফুল ছাড়া সাকিব-নাসুমরা বাকি সব পেসারের চেয়ে এগিয়ে।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও যথারীতি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি সাকিব আল হাসান। এই ফরম্যাটে ৯৮ ম্যাচে সাকিবের ঝুলিতে জমা পড়েছে ১২০ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৭টি উইকেট মোস্তাফিজের ।

এর বাইরে পেসারদের ভেতরে সবচেয়ে ভালো বোলিং রেকর্ড বাঁহাতি শরিফুল ইসলামের। এ তরুণ এখন পর্যন্ত ২১ ম্যাচে পতন ঘটিয়েছেন ২৭ উইকেটের। সেরা বোলিং ৩/২৯ আর ওভার পিছু রান দিয়েছেন ৭.৬১।

দুই বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ আর শরিফুলের পরে এখনকার পেসারদের ভেতরে সবচেয়ে ভালো ট্র্যাক রেকর্ড মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। এ পেস বোলিং অলরাউন্ডার ২৯ ম্যাচে দখল করেছেন ৩১ উইকেট। সেরা বোলিং ৪/৩৩, ওভার পিছু ৮.২৬ রান খরচ করেছেন।

Advertisement

আরেক পেসার তাসকিনের রেকর্ড অনেক দুর্বল। ওভার পিছু রান আটের কম (৭.৯৬) রান দেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেও ম্যাচ পিছু উইকেট প্রাপ্তিতে তাসকিন (৩৪ ম্যাচ ২৩ উইকেট, সেরা ২/১২) অনেক পেছনে। সে তুলনায় বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের (২১ খেলায় ২৬ উইকেট, সেরা ৪/১০) ম্যাচ পিছু উইকেট অনেক বেশি। অফস্পিনার শেখ মেহেদিও গড়পড়তা পারফর্ম করে ৩৩ খেলায় পেয়েছেন ২৬ উইকেট।

পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, বাংলাদেশ তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামলে সেখানে দুই বাঁহাতি মোস্তাফিজ ও শরিফুলের সঙ্গী হতে পারেন শুধু পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডমিনিকার শতভাগ ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামলো তাসকিনকে নিয়ে।

যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মার খেয়ে তাসকিন শুধু নিজে অকার্যকর প্রমাণ হননি। বাকিদের আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু ইনজুরির কারণে সাইফউদ্দিন দলেই নেই। সেখানে দুই পেসারের সঙ্গে তিন স্পিনার ফর্মূলা হতে পারতো সম্ভাব্য সেরা অপশন।

কিন্তু তা না করে টিম ম্যানেজমেন্ট বাড়তি অ্যাডভেঞ্চার করতে গেলেন। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তিনজন জেনুইন পেসার খেলানো হলো। এর মধ্যে ইনজুরি থেকে ফিরে আসা তাসকিনকে খেলানোর চড়া মাশুলও গুনতে হলো। তাসকিন বেদম মার হজম করলেন।

অথচ অফস্পিনার মোসাদ্দেক এক ওভার বল করে উইকেট মেইডেন নিয়েছেন। তাতেই বোঝা গেছে, হাত খুলে খেলা যাদের সহজাত প্রবৃত্তি, সেই ক্যারিবীয়দের উত্তাল উইলোবাজি থামাতে বাড়তি পেসারের চেয়ে স্পিনারই হতেন বেশি কার্যকর। এখন ৭ জুলাই শেষ ম্যাচেও কি সেই তিন পেসার ফর্মুলাই থাকবে? নাকি নাসুমকে নেওয়া হবে?- সেটিই দেখার।

এআরবি/এসএএস/এমএস