জাতীয়

চুরির মামলায় জেলে গিয়ে দল গঠন, ঈদে মহাসড়কে ডাকাতির মহাপরিকল্পনা

গত পাঁচ বছর ধরে সংঘবদ্ধ হয়ে রংপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটির সদস্যরা প্রথমে চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে দফায় দফায় কারাগারে যায়। পরে সেখানে একে অন্যের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে বড় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার ঝাঁজর এলাকা থেকে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের নয় সক্রিয় সদস্যকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

Advertisement

সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম (৩৪), মো. আয়নাল মিয়া ওরফে আয়নাল হক ওরফে আয়নাল (৩৯), মো. আন্ডু মিয়া (৫৭), মো. আজিজুল ইসলাম ওরফে আইনুল (৩২), উজ্জল চন্দ্র মহন্ত (২৭), মো. শাহিন ওরফে সজিব (৩৩), মো. শহিদ (৩৮), মো. রনি সরকার (২৪) ও মো. আব্দুল হাকিম ওরফে গাটু ওরফে আব্দুল গাটু মিয়া (৪০)। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলি, দুটি ওয়ান শুটার গানের গুলি, দুটি ছোড়া, একটি রামদা, একটি দা, পাঁচটি গামছা জব্দ করা হয়।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই চক্রের তৎপরতা সম্প্রতি বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (৩ জুলাই) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের গাছা থানার ঝাঁজর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের নয়জন সদস্যকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

লেফট্যান্ট কর্নেল বলেন, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ১২ জন। এ ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলাম। তার অন্যতম সহযোগী আন্ডু মিয়া ও আয়নাল মিয়া, যারা ডাকাতির পরিকল্পনা ও অন্যান্য ডাকাতদের সংঘবদ্ধ করে থাকেন। তারা গত পাঁচ বছর ধরে একই সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে রংপুর এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। প্রথমে তারা চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন দফায় জেলে থাকার কারণে গত কয়েক বছর যাবত ডাকাতির পেশায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার শহিদুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ডাকাত চক্রের মূলহোতা। তিনি আগে রিকশা চালাতেন। পরবর্তীসময়ে সহজলভ্য ও বেশি অর্থের লোভে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়েন। তারা সাধারণত প্রতিমাসে দুই থেকে তিনবার ছয় থেকে নয়জন দলে সংগঠিত হয়ে প্রথম দিকে রংপুর ও পরবর্তীসময়ে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও মহাসড়কে ডাকাতি করতেন। ডাকাতির কৌশল হিসেবে তারা সড়কগুলোর নির্জন স্থানে রাতের আধারে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। পরে তারা ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল বা ছোট পিকআপসহ ছোট আকারের যানবাহনকে টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে ভিকটিমদের জিম্মি করে ডাকাতি করতেন। গ্রেফতার শহিদুলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আয়নাল মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি এ ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী ও ডাকাতি দলের জন্য গাজীপুরের জেলার গাছা থানার ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চুরি ও ডাকাতির চক্রের সঙ্গে জড়িত। আগে পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। প্রথমে সহজলভ্য এবং অধিক অর্থের আশায় তার নিজ এলাকায় ছোট ছোট চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীসময়ে একই এলাকার ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয়ের পর তার সঙ্গে ডাকাতি চক্রে জড়িয়ে পড়ে। আইনাল মিয়ার মূল দায়িত্ব ছিল জায়গা নির্ধারণ ও অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের সংঘবদ্ধ করা।

‘এছাড়া ডাকাতির স্থান এবং সময় নির্ধারিত হলে অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের নিজ এলাকা থেকে নিয়ে এসে তার আবাসস্থলে অবস্থান করান। সাধারণত ডাকাতির পর লুণ্ঠিত মালামাল তিনি ডাকাত সর্দারের নির্দেশে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করতেন। এছাড়াও তিনি ছোট ছোট মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আইনালের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে।’

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতার আন্ডু মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী ও পরামর্শদাতা। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে চুরি ও ডাকাতির চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগে তিনি পেশায় একজন চা দোকানি ছিল। আগে তিনি অন্য এক ডাকাত দলের সর্দার খোকন মিয়ার সঙ্গে ডাকাতি করলেও পরবর্তীসময়ে খোকন মিয়া ২০১৮ সালে ডাকাতির মামলায় জেলে গেলে তিনি শহিদুলের ডাকাত দলের সঙ্গে যোগদান করে। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির পেশায় জড়িত থাকায় তিনি সাধারণত এই ডাকাত চক্রের পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার শহিদ এ ডাকাত চক্রের সঙ্গে তিন বছর ধরে জড়িত। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক হলেও নিজ এলাকায় কুখ্যাত চোর হিসেবে পরিচিত। ওই ডাকাত চক্রে সে ডাকাতির পর পলায়ন পরিকল্পনাকারী ও পলায়নে সহায়তার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও চুরিসহ ১২টি মামলা রয়েছে।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এছাড়াও ডাকাত চক্রের সদস্য শাহিনের বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ দুটি, উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ দুটি, আজিজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি, আব্দুল হাকিম এবং রনি সরকারের বিরুদ্ধে চুরির একটি করে মামলা রয়েছে।

টিটি/আরএডি/জিকেএস