ফিচার

যে গ্রামের মানুষের নেই কোনো নাম

প্রতিটি মানুষের আলাদা পরিচিতির জন্য নিজস্ব একটি নাম থাকে। জন্মের পরই প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় একটি নাম। তবে এমনই এক গ্রাম আছে যেখানে কোনো শিশু জন্ম নিলে তার নাম রাখা হয় না। গ্রামটি অবস্থিত নেপালের মেঘলায়। যার নাম কং থং।

Advertisement

অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, এ গ্রামের নারীরা তার শিশুর নাম রাখেন না। এর পরিবর্তে শিশুর জন্য সুর তৈরি করেন। নামে নয় সুরে শিশুর পরিচিতি হয়। শুধু মায়েরা নন, সন্তানদের বাবারাও এই সুরে সুরে ডাকতে পারেন তাদের। তবে সুর তৈরি করার অধিকার শুধু মায়েদেরই থাকে। আর এই সুরেই তাদের ডাকা হয়, বড় হওয়ার পর এই সুরেই তারা পরিচিত হয়।

সেই সুরগুলোর কিছু হয় খুব ছোট। যেমন-কোওও কোওও। আবার কিছু কিছু সুর হয় লম্বা ধরনের। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, ঐ গ্রামের কেউই জানে না এই রীতি কবে, কখন কীভাবে শুরু হয়েছে। তবে এখন বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এই গ্রাম হয়ে উঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই পাহাড়ের উপর এই গ্রাম দেখতে যান। ইউনেস্কো এই গ্রামকে ‘বেস্ট ট্যুরিজম ভিলেজ’ হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে।

অন্যদিকে তুরস্কের কুস্কো নামের গ্রামের মানুষ কথা বলেন পাখির ভাষায়। যদিও তাদের নিজস্ব এক ভাষাও আছে। তারপরও ক্ষেতে কাজ করতে গেলে কিংবা বাড়িতেই একজন অন্যজনের সঙ্গে ভাব বিনিময় করছেন শিস দিয়ে।সেই শিসের বিভিন্ন অর্থও আছে।

Advertisement

এই ভাষা ‘পাখির ভাষা’ নামেই পরিচিত। মূলত দূরের কারো সঙ্গে চিৎকার করে কথা না বলে তারা শিস দিয়ে বোঝান। শিসের শব্দ জোরে হয়ে এবং তা সহজেই যাকে উদ্দেশ করে বলছেন তার কানে পৌঁছে। কেউ হয়তো ক্ষেতে কাজ করতে করতে দূরের কাউকে শিস দিলে বুঝিয়ে দিলেন যে তার কাস্তেটা দরকার। কেউ হয়তো পাহাড়ের ওপরের বাড়ি থেকে শিস দিয়ে নিচের দোকানদারকে বললেন যে তার দুটো রুটি দরকার।

উচ্চমাত্রার শব্দের এই শিসগুলো গ্রামবাসীদের ভাষা বিনিময়ের অনন্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। পাহাড়বেষ্টিত এই গ্রামে এটা দারুণ সুবিধা করে দিয়েছে গ্রামবাসীদের। এ গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই শিস বাজাতে তাই দারুণ দক্ষ।

আশপাশের বাড়ির লোকজনেরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে এই গোপন ভাষায় কথা বলেন। বাইরের কেউ শিস শুনে কিছুই বুঝবেন না। কিন্তু তারা পরস্পরের শিসের ভাষাটা বুঝে নেবেন। একজন পাশের বাড়ির চিকিৎসকের উদ্দেশে শিস দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে তার পায়ে ব্যথা করছে। জবাবে চিকিৎসক জানালেন তিনি এসে দেখে যাবেন।

আরেক নারী তার প্রতিবেশীকে শিস দিয়ে বিকেলে চায়ের দাওয়াত দিলেন। বিনিময়ে নিমন্ত্রণ গ্রহণের জানান দিলেন আরেকজন। ক্ষেতে কাজ করা কৃষকদের উদ্দেশে একজন শিস দিয়ে বললেন, খাবার প্রস্তুত। তোমরা খেতে আসো। কৃষকরাও শিসে জানালেন তারা আসছেন। স্কুলেও শিশুরা শিস দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। এমনকি প্রয়োজনীয় কথাও তারা বলে শিসের মাধ্যমে।

Advertisement

বর্তমানে ১০ হাজারের মতো মানুষ পাখির ভাষায় কথা বলতে পারেন। একসময় মানুষ যখন ইশারায় মনের ভাব প্রকাশ করতো, তখনই শিস ভাষা হয়ে ওঠে। ইউনেস্কো একে বিলুপ্তপ্রায় ভাষার তালিকায় স্থান দিয়েছে।

এই ভাষা নিয়ে বছর শেষে মেলার আয়োজন হয় গ্রামে। সেখানেই পাখির ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে সবাই নিজের মতামত দেন।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, লাইভ মিন্ট, বিবিসি

কেএসকে/জিকেএস