আলঝেইমার একটি স্নায়বিক ব্যাধি। এটি ভুলে যাওয়ার রোগ নামেও পরিচিত। আলঝেইমারের কারণে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা করার দক্ষতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজে কিছু মনে করতে পারেন আবার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণও করতে পারেন না তারা।
Advertisement
এই রোগে নারী-পুরুষ উভয়ই ভোগেন। ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে আলঝেইমার বেশি দেখা দেয়। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা দেয় ডিমেনশিয়া।
আলঝেইমার রোগের নামকরণ করা হয় ডা. অ্যালোইস আলঝেইমারের নামে। তিনি অস্বাভাবিক মানসিক অসুস্থতায় মারা যাওয়া একজন নারীর মস্তিষ্কের টিস্যুতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন। ওই নারী স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ভাষার সমস্যা ও অপ্রত্যাশিত আচরণে ভুগছিলেন।
ওই নারীর মৃত্যুর পর ডা. আলঝেইমার তার মস্তিষ্ক পরীক্ষা করেন। তিনি মস্তিষ্কে অনেক অস্বাভাবিক ক্লাম্প ও জটযুক্ত ফাইবারের বান্ডিল খুঁজে পান। যা আলঝেইমার রোগের মূল কারণ।
Advertisement
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৮২ শতাংশ নারী আলঝেইমার রোগে ভুগছেন। জরিপে অংশ নেওয়া নারীদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ তাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি।
আলঝেইমার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ৫ জনের মধ্যে অন্তত একজন নারীর আনুমানিক ৬৫ বছরের মধ্যে আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আলঝেইমারে আক্রান্ত। যার মধ্যে প্রায় ৪ মিলিয়নই নারী।
৬০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের চেয়ে আলঝেইমারের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ। সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুসারে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা আলঝেইমারে বেশি ভোগেন।
তবে কেন নারীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি? গবেষকরা এর পেছনে সম্ভাব্য জৈবিক ও সামাজিক কারণকে দায়ী করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো ও বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা ‘MGMT, O6-Methylguanine-DNA-methyltransferase’ নামে একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেছেন। যা নারীদের মধ্যে আলঝেইমারের বর্ধিত ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
Advertisement
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে আলঝেইমারের বৈষম্য থাকার আরও এক কারণ হতে পারে, নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশিদিন বাঁচেন। আর বয়স্কদের মধ্যে আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
কীভাবে নারীরা আলঝেইমারের ঝুঁকি কমাবেন?
যদিও বয়স বা জিনের মতো কিছু ঝুঁকির কারণ পরিবর্তন করা যায় না, তবে অন্যান্য ঝুঁকির কারণ যেমন- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।
ব্যায়াম আপনার মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে মস্তিষ্কের কোষকে সাহায্য করে। হার্টের জন্য যেসব খাবার ভালো সেগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও উন্নত করে। চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ কমাতে হবে।
ডায়েটে প্রচুর ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্য রাখতে হবে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, মুরগি, মটরশুটি, বীজ, বাদাম ও উদ্ভিজ্জ তেল পাতে রাখুন।
বেশ কয়েকটি গবেষণা দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী সামাজিক সংযোগ ও নিয়মিত বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে আলঝাইমারের ঝুঁকি কমানো যায়। সামাজিক উদ্দীপনা মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষের মধ্যে সংযোগ শক্তিশালী করে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/জেআইএম