তামিম ইকবাল থেকেও নেই। তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে ৬ মাসের ছুটিতে। হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নেই মুশফিকুর রহিমও। এ দুজন অভিজ্ঞ পারফরমারের অনুপস্থিতিতে দলের চালিকাশক্তি হলেন অপর দুই সিনিয়র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান।
Advertisement
আজ রাত থেকে যে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার বড় অংশ নির্ভর করছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও চাম্পিয়ন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ওপর। ইতিহাস-পরিসংখ্যান স্বাক্ষী, তারা দুজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেশ সফল।
খুব বেশি পেছন ফিরে তাকাতে হবে না, চার বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশের তিন ম্যাচের যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হয়েছে, তাতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজজয়ী বাংলাদেশের পক্ষে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান (১০৩ রান ও ৩ উইকেট )।
সেটিই শুধু নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একই বছরের ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়ের ম্যাচেও দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে (২৬ বলে ৪২ রান ও ২০ রানে ৫ উইকেট) ম্যাচসেরা হন সাকিব, বাংলাদেশ পায় ৩৬ রানের জয় ।
Advertisement
সাকিবের মতো ম্যাচ জেতানো ভূমিকা রাখতে না পারলেও বর্তমান টাইগার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও মোটামুটি কার্যকর পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৬৫ রান করেছে মাহমুদউল্লাহই।
কিন্তু ক্রিকেট ১১ জনের খেলা। শুধু দুই সিনিয়র ব্যাট-বল হাতে জ্বলে উঠলেই চলবে না। দলের সাফল্য ত্বরান্বিত করতে হলে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সবার সহযোগিতা। সিনিয়ররা দুজন খুব ভাল পারফরম করলেন কিন্তু বাকিরা কিছুই করতে পারলেন না, তাহলে হবে না। দল জেতাতে চাই সবার কার্যকর পারফরম্যান্স।
দেশের অন্যতম প্রশিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদিন ফাহিমও মনে করেন টিম বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তার সোজাসাপটা কথা, তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদরা সাধ্যমতো পারফর্ম করেছে। তাদের করণীয় কাজ ঠিকমত করে টিম বাংলাদেশকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছে। এখন তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে, কার্যকর অবদান রাখতে হবে। তরুণদেরই দল জেতানো ভূমিকা নিতে হবে।
তাই আজ থেকে যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে সেখানে লিটন দাস, মুনিম শাহরিয়ার, এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামদের রাখতে হবে কার্যকর অবদান।
Advertisement
ইতিহাস জানাচ্ছে, লিটন দাস এরই মধ্যে দল জেতানো ভূমিকা রেখেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে লিটন দাসের ট্র্যাক রেকর্ড বেশ ভাল। দুটি করে ফিফটি ও চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস (২৪, ১, ৬১, ৬, ৬০, ৪৩ ও ৪৪) আছে লিটনের।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে গত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ সাক্ষাতে ৩ রানে হারের ম্যাচে লিটন ৪৩ বলে ৪৪ রানের এক ইনিংস খেলেন। তবে দল জেতাতে পারেননি। এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকার মিরপুরে যথাক্রমে ২৫ বলে ৪৩ ও ৩৪ বলে ৬০ রানের দুটি ঝড়ো ইনিংস আছে তার।
আর ২০১৮ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের লডারহিলের সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড রিজিওনাল টার্ফে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৯০.৬২ স্ট্রাইকরেটে ৩২ বলে ৬১ রানের হ্যারিক্যান ইনিংস খেলে দল জিতিয়ে (বাংলাদেশ ডিএল ম্যাথডে ১৯ রানে জিতেছিল) ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ের রেকর্ডও আছে লিটনের।
বাকি তরুণদের মধ্যে মুনিম শাহরিয়ার, নুরুল হাসান সোহান ও নাসুম আহমেদ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কখনো খেলেননি। আফিফ হোসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেছেন। সেটা ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেখানে ২ বলে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ।
অফস্পিনিং অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এক ম্যাচ খেললেও ব্যাটিং করেননি। বোলিংয়ের সূচনা করে ৪ ওভারে ২৭ রানে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। মোস্তাফিজ আবার বেশ ভালো বোলিংয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাত ম্যাচে এ বাঁহাতি পেসারের উইকেট ১৫টি, সেরা বোলিং ৩১ রানে ৩ উইকেট।
তবে দ্রুতগতির বোলার তাসকিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুই ম্যাচ খেলে এখনও উইকেটশূন্য। আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছেন। সেটি ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেদিন শরিফুলের বোলিং ফিগার ছিল ৪ ওভারে ২০ রানে ২ উইকেট।
এখন দেখা যাক, এই এক ঝাঁক তরুণের কারা আজ রাতে ডোমিনিকায় ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠে দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখতে পারেন।
এআরবি/এসএএস/এমএস