ভোলায় বিগত ৪ বছর পরীক্ষামূলক চাষের পর এবার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে বেবি তরমুজ। এটি বর্ষাকালীন চাষযোগ্য তরমুজ। এ তরমুজের বীজ বপনের মাত্র দুই মাসের মধ্যে কম খরচে ক্ষেতে বেশি ফলন হওয়ায় হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকদের মুখে। বাজারের বেবি তরমুজের চাহিদা ও দাম ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। এদিকে এবছর কৃষকদের সফলতা দেখে আগামী আরও বেশি কৃষক এ জাতের তরমুজ চাষের আগ্রহী হচ্ছেন।
Advertisement
সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৮ সালের দিকে প্রথমবারের মতো একটি এনজিওর উদ্যোগে ভোলা জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছিল বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজ। এরপর আরও ৩ বছর কৃষকরা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয় ওই তরমুজ। আর পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাপক সফলতা পাওয়া এবছর ভোলা সদর, দৌলতখান, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে ব্ল্যাক বেবি ও সুপার কুইন জাতের বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজ।
দৌলতখান উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়নগর গ্রামের কৃষক মো. সালাউদ্দিন জানান, তিনি এবছর ৩৩ শতাংশ জমিতে সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ করেছেন। ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত দুইবার ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ফলন বাজারে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে ক্ষেতে আরও যে পরিমাণ ফলন আছে তা থেকে আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, তিনিও এবছর ৪০ শতাংশ জমিতে বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। ক্ষেতে রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ খুবই কম। বীজ রোপণের মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। বাজারের এ জাতের তরমুজের চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজার দামও অনেক বেশি পাচ্ছি। খুচরা বাজার এক একটি তরমুজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি করতে পারছি।
Advertisement
তিনি এবছর আরও এই তরমুজ চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। আগামীতে তিনি বাণিজ্যিকভাবে আরও বেশি জমিতে বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করবেন।
ওই গ্রামের কৃষক মো. স্বপন জানান, তিনি বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেন তার পাশের জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন এক কৃষক। ওই কৃষকের কাছ থেকে তিনি বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ করার কৌশল শিখে নিয়েছেন। আগামী বছর তিনি ২ থেকে ৩ একর জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করবেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসূল কবীর জাগো নিউজকে জানান, ভোলা জেলায় ৪ থেকে ৫ বছর ধরে বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ হয়ে আসছে। তবে এবছর থেকে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। বাজারে এ জাতের তরমুজের চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এ জাতের তরমুজ চাষে প্রশিক্ষণসহ সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছেন।
তিনি আরও জানান, এবছর ভোলা জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে বেবি বা বর্ষাকালীন তরমুজের আবাদ হয়েছে। আগামীতে এর আবাদ অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন তিনি।
Advertisement
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমএফ/এমএস