জব্দ ১০৪ কেজি স্বর্ণালংকার নাথ জুয়েলার্সের সত্ত্বাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। একই সঙ্গে চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে জব্দ ওই স্বর্ণালংকার বণ্টন করবে নাথ জুয়েলার্সের উত্তরাধিকারীরা।আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ খারিজ করে এই আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ।দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে পাওয়া আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে ২৩৪ জন বন্ধকদাতাকে লেজার বুক (হাল খাতা), মর্গেজ রেজিস্ট্রার ও জব্দ তালিকা অনুযায়ী লাভ-লোকসানের হিসাব-নিকাশ করে জব্দ ওই স্বর্ণালংকার, রৌপ্য, পাথর ও ২৫ লাখ টাকা বন্ধকদাতাদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে বলে জানান নাথ জুয়েলার্সের ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।২০০৪ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা টাস্কফোর্স নাথ জুয়েলার্সে অভিযান পরিচালনা করে ১০৪ কেজি স্বর্ণ, সাড়ে ৩ কেজি রৌপ্য ও প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন নগরীর কোতয়ালি থানায় নাথ জুয়েলার্সের মালিক রামকৃঞ্চ নাথকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পণ মাণি ল্যান্ডিং বিজনেসের আওতায় নিজের এবং ২৩৪ জন বন্ধকদাতার স্বর্ণ ওই প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত ছিলো। চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে রামকৃঞ্চ নাথকে অব্যাহতি দেন এবং জব্দ স্বর্ণ তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতে আবেদন দিয়ে ৪৬ জন বন্ধকদাতা স্বর্ণ ফেরত চেয়ে আবেদনও করেন। তাদেরকেও স্বর্ণ ফেরত দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলেন। ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর নাথ জুয়েলার্সের মালিকের বিরুদ্ধে মানি লন্ড্রারিং আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।এই মামলা বাতিল চেয়ে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট মামলা বাতিল করে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি রায় দেন।রায়ে বলা হয়, স্বর্ণ বন্ধক রেখে অর্থ প্রদান এটি একটি জেনুইন বিজনেস। হয়রানি করার জন্যই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া জব্দ স্বর্ণ থেকে নিজের স্বর্ণ রেখে বন্ধকদাতা ২৩৪ জনকে স্বর্ণ ও রৌপ্য ফেরত দিতে বলা হয়। রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আপিল দায়ের হয়। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় মারা যান রামকৃঞ্চ নাথ। পরে তার স্ত্রী পারুল নাথ এবং দুই পুত্র সঞ্জয় নাথ ও পলাশ নাথ মামলায় স্থলাভিষিক্ত হন। ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রায়ে পরিবারের পরিবর্তে মর্গেজ রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই স্বর্ণ বণ্টনের আদেশ দেওয়া হয়। বাকিটা ওয়ারিশদের দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদন দাখিল করেন নাথ জুয়েলার্সের মালিকগণ। পরিপূর্ণ ন্যায় বিচার চেয়ে এই আবেদন দাখিল করেন তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ আগের রায় সংশোধন করে নাথ জুয়েলার্সের মালিকদের জব্দ স্বর্ণ বন্ধকদাতাদের মধ্যে বন্টনের আদেশ দেন। আপিল বিভাগের এই আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন দাখিল করেন ৪৬ জন দাবিদার। মঙ্গলবার ওই আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন বলে জানান ব্যারিস্টার মামুন। এফএইচ/একে/আরআইপি
Advertisement