জাতীয়

গ্যাস সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

গ্যাস সংকট রয়েছে এমন কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাস সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে। বিকল্প হিসেবে আমরা এলপিজি আমদানি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা নির্মাণ হলে বাইরে থেকে যদি গ্যাস আনতে পারি তাহলে হয়তো এই সমস্যার কিছুটা সমাধান আমরা করতে পারবো। বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গ্যাস সংকটের কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত শীতকালে গ্যাস জমে যায়,‘ফ্লো’টাও কমে যায়। সেজন্য শীতকালে সবসময় গ্যাসের সমস্যাটা একটু দেখা দেয়। গ্যাস একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এর একটি সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সরকারে আসার পর গ্যাসের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করেছি। বৃদ্ধি করলেও যেহেতু ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে, চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো কুপও খনন করেছি। তিনি বলেন, বাপেক্সকে আমরা শক্তিশালী করেছি। গ্যাস অনুসন্ধ্যানও চলছে। কিন্তু তারপরও সংকট যে কিছুটা নেই তা আমি বলবো না। সংকট আছে। এই দূর করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। চুলার জন্য, রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য এলপিজি গ্যাস যা সিলিন্ডারে পাওয়া যায় তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে দেয়া হয়েছে।  তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারী যাতে আসে সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। সংকট কাটাবার চেষ্টা আমরা করছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের গ্যাস যে আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা খুবই কঠিন। আমরা অনেক সিস্টেমিক সার্ভে করেছি। যার মধ্যে থেকে আমরা জানবার চেষ্টা করছি, নতুন নতুন জায়গা আমরা খুঁজছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিশাল সমূদ্র আমরা পেয়েছি সেই সমুদ্রেও গ্যাস অনুসন্ধ্যানের জন্য ইতোমধ্যে আমরা ব্লক নির্দিষ্ট করেছি এবং টেন্ডার দেয়া হয়েছে। এটার যদি ধারাবাহিকতা থাকতো তাহলে হতো। কিন্ত অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল  এ ব্যাপারে তারা খুব একটা দৃষ্টি দেয়নি বলে বেশ সমস্যা। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি গ্যাসের সংকট হয়তো মেটাতে পারবো।পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের ভার জনগণের হাতে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিনের এমন সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দেশের সর্বনাশ করতে চায়, আর দেশের মানুষের স্বার্থ না দেখে তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কিছুই নাই। এটা ঠিক কোনো ব্যক্তি বিশেষ তার ব্যক্তি স্বার্থে কারণে। আমাকে অনেক সময় অনেক থ্রেটও করা হয়েছিলো। বিশেষ এক ব্যক্তি তার ব্যাপারে। তিনি বলেন, একটা এমডির পদ না থাকলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করা হবে-এটা কিন্তু সরাসরি বলাও হয়েছে। এ ধরনের বহু কথাই আমাকে শুনতে হয়েছে। সেগুলো আমি কিছু বলতে চাই না। মানুষের মাঝে যদি দেশপ্রেম না থাকে, জনগণের প্রতি তাদের যদি কোনো দায়িত্ববোধ না থাকে সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থেই অন্ধ থাকে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যাবে তা জনগণই বিচার করবে। আমি বিচারের ভার জনগণের হাতে ছেড়ে দিলাম। সততাই শক্তি, সততাই সাহসময়মনসিংহ-৮ আসনের ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততাই শক্তি, সততাই সাহস। আমার জীবনে রাজনীতির একটাই লক্ষ্যে যে মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছে। এই মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নেব। ছোট বেলা থেকে আমরা যা দেখেছি সন্তান হিসেবে তা আমাদের পালনীয়। আমি মনে করি, জনগণের জন্য কিছু করার সুযোগ। নিজে কি পেলাম সেটা কখন দেখি না। আমরা কখনও এটা চিন্তা করি না, ছেলে-মেয়েদের জন্য কি রেখে গেলাম। জনগণের চিন্তা করি বলেই জনগণই আমার শক্তি। এদেশের মানুষের শক্তিতেই আমার শক্তি। তাদের উপর আমার আস্থা আছে। পদ্ম সেতুর খরচ বাড়তে বা কমতে পারেকাজী ফিরোজ রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে পদ্ম সেতুটা নির্মাণ করছি এটা বাংলাদেশে নতুন জিনিস। এই সেতুর নিচ দিয়ে রেল যাবে। দোতলায় গাড়ি যাবে। পদ্মা নদীটা অত্যন্ত খরস্রোত নদী। কাজেই খরস্রোত নদীতে এই ধরনের একটি সেতু নির্মাণ করা আসলে খুব একটা কঠিন কাজ। এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে সময়ের প্রয়োজনে অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাছাড়া আপনারা জানেন যে কিছুটা কাজ শুরু করার পর হঠাৎ নদী ভাঙ্গন শুরু হলো। তিনি বলেন, ভাঙ্গন রোধ করা, এই এলাকার যে মানুষগুলো জায়গা দিয়েছে তাদেরকে জায়গা দিয়ে সেখানে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা, বিভিন্ন কাজ কিন্তু করতে হচ্ছে। সেই সাথে সাথে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা। এতে সময় সময় প্রকল্পের টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। কাজে এই মুহূর্তে সামনে বৃদ্ধি পাবে কিনা বা পাবে না এরকম স্পষ্ট কথা এখন আমি বলতে পারবো না, বলা  সম্ভব নয়। কারণ এটা বাংলাদেশে একটা নতুন টেকনোলজি এবং সম্পূর্ণ নতুনভাবে এবং এতো বড় ব্রিজ প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটারের মতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো বড় ব্রিজ আজ পর্যন্ত আমরা নির্মাণ করতে পারিনি। সেই কারণেই যেহেতু এটা আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করছি। টাকা বাড়তেও পারে আবার বেঁচে যেতেও পারে। দুই রকমের হতে পারে। ইতোমধ্যেই আমরা অনেক কাজ শেষ করেছি। আমরা আশাকরি ২০১৮ সালে এই সেতু দিয়ে গাড়িতে করে আমরা ওপারে চলে যেতে পারবো। ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশী কর্মী গমনভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের লিখিত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সফলতায় ২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী গমন করেছে। বিগত জোট সরকারের অপনীতির কারণে বাংলাদেশের শ্রম বাজার সংকুচিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যেও বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছে।তিনি বলেন, ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত জোট সরকারের আমলে বিশ্বের মাত্র ৯৭টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হত। বতর্মান সরকারের আমলে নতুন আরো ৬৩টি দেশে কর্মী প্রেরণসহ বর্তমানে এই সংখ্যা ১৬০টি দেশে উন্নীত করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০১৩ সালে মোট ৪ লাখ ৯ হাজার ২৫৩ জন, ২০১৪ সালে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন এবং ২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী গমন করেছে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকের তুলনায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশি। এক্ষেত্রে বিদেশগামী শ্রমিকদের দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে দেশে ৬৫টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও ৬টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের  উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিদ্যমান শ্রম উইং’এর সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮’এ উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়ায় অবৈধ ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৩ জন অভিবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরব অধিক সংখ্যক নারী কর্মীর পাশাপাশি তাদের নিকট আত্মীয় সমসংখ্যক পুরুষ কর্মী নিতে সম্মত হয়েছে।এইচএস/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement