সরাসরি ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কপথ চালু হওয়ায় সড়কে বেড়েছে যানবাহন। তবে পদ্মা সেতুর সংযোগ জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত সড়ক সরু হওয়ায় সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে। এতে পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শরীয়তপুরবাসী।
Advertisement
ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। আগে নৌপথে শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগতো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। সেতু চালু হওয়ার পর সময় লাগার কথা ছিল দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। কিন্তু পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক সরু হওয়ায় বেড়েছে যানযট। তাই সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারণে হতাশ শরীয়তপুরের শরীয়তপুরের মানুষ। তাদের দাবি, সড়কটি দ্রুত প্রশস্ত করা হোক।
পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছেন এসব বাসে। কিন্তু শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব বাসকে চলতে হচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চালকদের।
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সড়কটি নিয়ে বিভিন্নজনকে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
Advertisement
নাজির মোল্লা, ইমরান আল নাসির, আহাদ আল আব্দুল্লাহ, হৃদয়ে শরীয়তপুরসহ অনেকেই ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘পদ্মা সেতুর দক্ষিণ পাড় (নাওডোবা) থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত যতদিন না চার লেনের সড়কের কাজ শেষ হবে, ততদিন পদ্মা সেতুর সুফল শরীয়তপুরবাসী পাবে না। তাই আমাদের দাবি, অতিদ্রুত এ সড়কের কাজ শেষ করতে হবে।’
শরীয়তপুর সদরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট জাকির হোসাইন দুলাল জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত সড়ক ও মধ্যবর্তী সেতু সরু হওয়াতে এককথায় আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সেতু থেকে শরীয়তপুর জেলার প্রবেশমুখে কাজিরহাট পর্যন্ত সারাদিন যানজট লেগেই আছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি না। অতিদ্রুত এ সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় এমপি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
শরীয়তপুরের বাসচালক আজগর জাগো নিউজকে বলেন, ‘শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত কোনোরকমে যেতে পারলেও ওখান থেকে মাত্র ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে পরের ১০ কিলোমিটার যেতে হয়। একটি রিকশাকে সাইড দিতেও গাড়ির চাকা সড়কের বাইরে চলে আসে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এখনো মাঝেমধ্যে তিন ঘণ্টারও বেশি লাগে ঢাকা পৌঁছাতে। সড়কটির উন্নয়ন হয়ে গেলে মাত্র দেড় ঘণ্টায় যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া যাবে।’
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের বাসিন্দা মুন্না ব্যাপারী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হয়েছে অথচ আমরা সুফল পাচ্ছি না। ঢাকা যেতে শরীয়তপুর অংশের সড়কের মধ্যে থাকা অবস্থায় সবসময় আতংকে থাকতে হয়। অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গেলে রাস্তা ছেড়ে গাড়ির চাকা মাটিতে নেমে যায়। বৃষ্টির দিনে খুবই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।’
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। চার লেনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও আপাতত ৩৩ দশমিক ৫ ফুট প্রশস্ত করে দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কাজ করতে বিলম্ব হচ্ছে।’
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন উন্নয়নের মহারানি। তার নির্দেশেই শরীয়তপুরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ফোর লেনের সড়ক বরাদ্দ হয়েছে। ২০২০ সালে একনেকে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার ফোর লেন প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুমোদনের পর দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও করোনা ও নানান জটিলতা ছিল। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ সড়কে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়েছে। আমরা যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। কাজিরহাট তিন রাস্তার মোড় থেকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে যেতে দুটি পথ। যানজট নিরসনে একটি দিয়ে যানবাহন যাবে, আরেকটি দিয়ে আসবে।’
এসআর/জিকেএস