সাইফুর রহমান তুহিন
Advertisement
বিশাল আয়তন এবং বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর সব ভ্রমণ স্পট। তবে সব জায়গায় কিন্তু সব সময় বেড়ানো যায় না আবহাওয়ার বৈচিত্র্যের কারণে। একেক জায়গার ভ্রমণ মৌসুম বছরের একেক সময়ে। এবারের লেখায় ভারতের এমন কিছু গন্তব্যের বর্ণনা দেওয়া হলো, যেগুলো বর্ষা মৌসুমে বেড়ানোর জন্য উত্তম।
ভালপারাই, তামিলনাড়ুএ নয়নাভিরাম হিল স্টেশনটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বর্ষাকালে এখানে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়। জায়গাটির ঘন বনভূমি, চা-বাগান, প্রবাহমান জলপ্রপাত, উপচেপড়া বাঁধ এবং মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া একে বর্ষাকালে দক্ষিণ ভারতের একটি দারুণ অবকাশ যাপন কেন্দ্র বানিয়েছে। ট্রেকার, প্রকৃতিপ্রেমী ও বন্য জীবন সম্পর্কে উৎসাহীরা অবশ্যই জায়গাটিকে তাদের পছন্দের তালিকায় স্থান দিতে পারেন।
আগুম্বে, কর্ণাটক আগুম্বে সন্দেহাতীতভাবে বর্ষাকালে দক্ষিণ ভারতের সেরা ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জায়গাটি ‘দক্ষিণ ভারতের চেরাপুঞ্জি’ হিসেবে পরিচিত। গোটা দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও নজরকাড়া সব উপত্যকার আশীর্বাদপুষ্ট আগুম্বে জুড়ে রয়েছে অগণিত জলপ্রপাত, যা বর্ষাকালে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
Advertisement
ওয়ানাদ, কেরালা ওয়েস্টার্ন ঘাটের ওপরে আয়েশী ভঙ্গিতে অবস্থিত ওয়ানাদ দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকাগুলোর একটি। বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত জায়গাটিকে খুবই আকর্ষণীয় করে তোলে। এখানে ভ্রমণকালে আপনি দেখতে পাবেন প্রাচীন এডাকাল গুহা, উষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমিতে করতে পারেন ট্রেকিং, জিপ সাফারি করে দেখতে পাবেন বন্যহাতি এবং অনেক কিছু।
আথিরাপাল্লি, কেরালা এটি সবার জানা যে, বর্ষাকাল প্রকৃতি ও জলপ্রপাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। একইভাবে কেরালা রাজ্যের আথিরাপাল্লি হচ্ছে এমন একটি জায়গা, যাতে বিদ্যমান বর্ষাকালে ভ্রমণের উপযুক্ত সব কারণ। প্রায় ৮০ ফুট উচ্চতা থেকে প্রবাহিত একই ধরনের অনেকগুলো পানির প্রবাহ আপনার মাঝে চমৎকার এক দৃষ্টিসুখকর অনুভূতির জন্ম দেবে, হয়ে যাবেন অভিভূত। বর্ষাকালে যখন পানির প্রবাহ অনেক জোরালো হয়; তখন জলাধারগুলো প্রায় একত্রিত হয়ে অনেকটা বিশ্ববিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাতের রূপ ধারণ করে।
ওটি, তামিলনাড়ু উধাগামান্দালাম হিসেবেও পরিচিত ওটি নীলগিরি হিলসে অবস্থিত। বছরজুড়েই ভ্রমণ করা যায় জায়গাটি। তবে বর্ষাকালে এখানে পাবেন চোখজুড়ানো সবুজের সমারোহ আর বইয়ে আঁকা দৃশ্যাবলীর মতো নজরকাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য। দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে রোমান্টিক জায়গা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত ওটি। তাই বর্ষাকালে এখানে বেড়াতে গেলে সেই স্মৃতি সহজে ভুলতে পারবেন না।
আল্লেপ্পি, কেরালাজায়গাটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার তেমন কিছু নেই। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য লোভনীয় এক জায়গা আল্লেপ্পি। চমৎকার ঘন সবুজে আবৃত প্রত্যন্ত এলাকা এটি। হাউজবোটে করে জলাভূমিতে ঘুরে বেড়ানো আপনার ভ্রমণের আনন্দ অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবে। বর্ষাকালে জায়গাটিতে একবার গিয়েই দেখুন না, কী চমক অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
Advertisement
লাম্বাসিঙ্গি, অন্ধ্রপ্রদেশএটি এতো সুপরিচিত জায়গা নয়। এখনো লোকজনের খুব ভিড়ও হয় না। তারপরও আপনার মনোযোগ আকর্ষণের উপাদান কম নেই লাম্বাসিঙ্গিতে। ভিশাখাপত্তম জেলায় অবস্থিত লাম্বাসিঙ্গি বর্ষাকালে আপনাকে দিতে পারে চমৎকার এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বর্ষা মৌসুমে ভ্রমণের আনন্দ পূর্ণতা পেতে পারে লাম্বাসিঙ্গিতে গিয়ে। জায়গাটিকে আদর করে ডাকা হয় ‘অন্ধ্রপ্রদেশের কাশ্মীর’ নামে। সমগ্র রাজ্যে লাম্বাসিঙ্গিই একমাত্র জায়গা; যেখানে তুষারপাত হয়ে থাকে এবং এটি খুব আকর্ষণীয়।
কন্যাকুমারীভারতের মানচিত্রের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এ ভ্রমণ গন্তব্যটি নজরকাড়া সমুদ্রসৈকত এবং ভারত মহাসাগরের দৃশ্যাবলীর জন্য বিখ্যাত। বর্ষাকালে জায়গাটি আরও প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে; যখন খাড়া পাহাড়ের মিশ্রণ, পর্বত, উপত্যকা ও সাগর মিলে এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এ সৌন্দর্যের কথা কখনোই ভুলতে পারবেন না। বর্ষাকালে জায়গাটিতে ভ্রমণ হয়ে থাকতে পারে জীবনের স্মরণীয় স্মৃতিগুলোর একটি।
লক্ষদ্বীপ বর্ষাকালে আপনার অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত এ উষ্ণমণ্ডলীয় স্বর্গ ভ্রমণের চেষ্টা করা। এখানকার চারপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আপনাকে ভীষণ মুগ্ধ করবে। কেরালার উপকূলে অবস্থিত এ দ্বীপপুঞ্জকে সমৃদ্ধ করেছে ৩৬টি প্রবাল দ্বীপ, যা এটিকে বানিয়েছে প্রকৃতিকে নতুন করে আবিষ্কার করার দারুণ এক গন্তব্য। স্বপ্নের এ সৈকতগুলোয় কিছু সময় কাটান এবং ভবিষ্যতে বারবার মনে করার মতো কিছু স্মৃতি জমা করুন।
মেঘমালতি, তামিলনাড়ু ‘আঁকাবাঁকা উঁচু পাহাড়ের পর্বত’ নামে পরিচিত মেঘমালতি ওয়েস্টার্ন ঘাটসে অবস্থিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৫০০ মিটার উঁচু। যারা বর্ষায় নিরিবিলি জায়গায় প্রশান্তি লাভের সুযোগ খোঁজেন, তাদের জন্য আদর্শ জায়গা মেঘমালতি। চা ও কার্ডামম চা গাছের বাগান দ্বারা বেষ্টিত মেঘমালতি বছরের এই সময়ে হয়ে ওঠে দারুণ আকর্ষণীয়। এসব বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো প্রকৃতির মাঝে হাঁটাহাঁটির জন্য আদর্শ।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।
এসইউ/জেআইএম