অর্থনীতি

বহুজাতিকেও ধরাশায়ী বিনিয়োগকারীরা

ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধন পণ্যের কল্যাণে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে রেকিট বেনকিজার। দেশের শেয়ারবাজারে বহুজাতিক এই কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৭ সালে। ভালো ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরাবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

Advertisement

বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে দামের তালিকায় সবার শীর্ষে। ২৩ জুন লেনদেন শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৭০ টাকা ৭০ পয়সা, যা গত ২৫ জানুয়ারি ছিল ৬ হাজার টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ পাঁচ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১ হাজার ২২৯ টাকা ৮০ পয়সা। সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৫৮১ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা।

শুধু রেকিট বেনকিজার নয়, ম্যারিকো বাংলাদেশ বাদে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সবকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দাম সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কমেছে। ফলে ভালো মুনাফার আশায় যেসব বিনিয়োগকারী বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন, তারা মুনাফার বদলে এখন লোকসান দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত্তি বেশ শক্তিশালী। প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ভালো মুনাফা করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম তুলনামূলক একটু বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম যেভাবে ওঠানামা করছে তা আগে কখনো দেখা যায়নি।

Advertisement

তারা বলছেন, তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে দেশীয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বেশ কম। এসব প্রতিষ্ঠানে বিদেশি ও বড় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বেশি। সম্প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ার দামে। এছাড়া সার্বিক শেয়ারবাজারেও কয়েক মাস ধরে নেতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে। সবকিছু মিলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের এমন দরপতন হয়ছে।

একসময় দেশের শেয়ারবাজারে সবচেয়ে দামি শেয়ার ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের। ডানহিল, লাকি স্ট্রাইক, কেন্ট, পলমল, কুল, বেনসন এবং রথম্যান্স তামাকজাত পণ্যের উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি তামাকজাত পণ্য বিক্রির দিকে থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত বড় মুনাফা করার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়।

বছর তিনেক আগে শীর্ষ স্থান হারানো কোম্পানিটির শেয়ার এখন সর্বোচ্চ দামের তালিকায় ১৩তম স্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনেও বড় ধরা খেয়েছেন বিনিয়োগাকারীরা। শেয়ারবাজারে চলমান মন্দার মধ্যে পড়ে চার মাসে কোম্পনিটির প্রতিটি শেয়ার দাম ১৩০ টাকা কমে গেছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৭০০ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৪২ টাকায়। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৬৭২ টাকা ৪০ পয়সা। এ হিসাবে চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ৭ হাজার ৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

Advertisement

দেশের বাজারে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা আরেক বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস। গত চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দামে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা গেছে। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৮২০ টাকা ৩০ পয়সা, যা ৮ মার্চ ১ হাজার ৬৬০ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে যায়। এরপর কয়েক দফা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮৭ টাকা ৭০ পয়সা।

ব্যাপক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম গত চার মাসে কমেছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১৫১ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। শেয়ারের সর্বোচ্চ দামের তালিকায় এই কোম্পানিটি চতুর্থ স্থানে।

সর্বোচ্চ দামের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ারের (সাবেক গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন) শেয়ার কিনেও বড় ধরনের লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা। গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন থেকে নাম বদলে ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’ নাম ধারণ করা এই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম সাম্প্রতিক সময়ে কমেছে ৪৭৬ টাকা ২০ পয়সা। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩ হাজার ২৯৮ টাকা ৯০ পয়সা, যা কমে এখন ২ হাজার ৮২২ টাকা ৭০ পয়সায় নেমেছে। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৫৭৩ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

রেকিট বেনকিজারে, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস’র পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ম্যারিকো বাংলাদেশ, লিন্ডে বাংলাদেশ, বাটা সু, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আরএকে সিরামিকস, সিঙ্গার বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন এবং রবি। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করেও স্বস্তিতে নেই বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকে বড় ধরনের প্রভাব রাখা গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ার দাম পাঁচ মাসের মধ্যে ৫০ টাকার ওপরে কমেছে। গত ১৭ জানুয়ারি এই মোবাইল ফোন অপারেটরটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৫৯ টাকা ৫০ পয়সা, যা কমতে কমতে এখন ৩০৩ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৫৫ টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৭ হাজার ৫৩৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা।

আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবির শেয়ার কিনেও বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি ৪১ লাখ ৬১ হাজার টাকা। গত ১২ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪১ টাকা ২০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে সেই শেয়ারের দাম এখন ২৮ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে গেছে।

নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দেওয়া লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ারও পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। পতনের মধ্যে পড়ে গত পাঁচ মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৫০৮ টাকা ২০ পয়সা কমেছে। এতে এই বহুজাতিক কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ৭৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৯৩৭ টাকা ৯০ পয়সা। সেই শেয়ারের দাম এখন কমতে কমতে ১ হাজার ৪২৯ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে গেছে।

দেশের বাজারে চামড়ার পণ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সু। ২০২০ ও ২০২১ সালে কোম্পানিটির ব্যবসায় ধস নামে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো কোম্পানিটি লোকসানের খাতায় নাম লেখায়। করোনার ধকল কাটিয়ে বড় মুনাফায় ফিরলেও এই কোম্পানিটির শেয়ার সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দামে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে।

চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বাটা সু’র প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯৫১ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে ৮ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমে হয়েছে ৮৭১ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর ৫ মে প্রতিটি শেয়ারের দাম আবার ৯৫৩ টাকা ১০ পয়সায় ওঠে। সেখান থেকে কমে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯২৮ টাকা ৩০ পয়সা। এ হিসাবে দেড় মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৩৩ কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার দাম গত ৬ এপ্রিল ছিল ৮০ টাকা ৪০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে সেই শেয়ারের দাম এখন ৬৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ আড়াই মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ১ হাজার ৩২৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

সিমেন্ট খাতের আরেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হাইডেলবার্গ সিমেন্টেও বড় ধরনের ধরা খেয়েছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। গত ২৫ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩২৬ টাকা ৭০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমে তা এখন ২১১ টাকা ৩০ পয়সায় চলে এসেছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১১৫ টাকা ৪০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৬৫২ কোটি ৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার দামেও সম্প্রতি বেশ উত্থান-পতন দেখা গেছে। গত ১৮ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৭৭ টাকা ৭০ পয়সা। ৮ মার্চ তা কমে ১৫৫ টাকায় চলে যায়। সেখান থেকে আবার দাম বেড়ে ৫ এপ্রিল ১৭২ টাকা ২০ পয়সায় ওঠে। অবশ্য এরপর আবার পতনের মধ্যে পড়ে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৬৩ টাকা ১০ পয়সা। এ হিসেবে দেড় মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৯ টাকা ১০ পয়সা। সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম কমেছে ৯০ কোটি ৭২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

আরেক বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকস নিয়েও অস্বস্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সিরামিক খাতের এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম গত ১ ফেব্রুয়ারি ছিল ৬১ টাকা ২০ পয়সা। এখান থেকে কমতে কমতে ২২ মে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪১ টাকায় নেমে যায়। এমন দরপতনের পর অবশ্য গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসেবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এখন কোম্পানিটির শেয়ার ১১ টাকা ৬০ পয়সা কম দামে রয়েছে। ফলে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৪৯৬ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

পতনের এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দেওয়া এই বহুজাতিক কোম্পানিটি চলমান হিসাব বছরে তিন মাস শেষ হওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী ৪৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত ৫ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এই লভ্যাংশের ঘোষণা আসে। এমন বড় অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দামেও। এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। গত ২২ মে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২ হাজার ৩২৬ টাকা ২০ পয়সা, যা বেড়ে এখন ২ হাজার ৪২৪ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।

শফিকুর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ভালো মুনাফা পাওয়ার আশায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৬৭২ টাকা করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ার কিনেছিলাম। লভ্যাংশ ঘোষণার পর কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার বদলে উল্টো কমেছে। এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম ৫৪২ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ১৩০ টাকা করে লোকসান। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার কিনে এমন ধরা খাব, কল্পনাও করতে পারিনি। এই লোকসান কবে রিকভারি হবে বুঝতে পারছি না। শুধু ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো নয়, সব বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দাম কমে গেছে।

এ নিয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামীণফোনসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে সম্প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেল প্রেসার (বিক্রির চাপ) ছিল। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দামে। তাছাড়া সার্বিক শেয়ারবাজারও কয়েক মাস ধরে মন্দার মধ্যে রয়েছে। সবকিছু মিলেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী। কোম্পানিগুলো নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দেয়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে দেশীয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তেমন বিনিয়োগ নেই। বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বড় বিনিয়োগকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দামে যে ধরনের অস্থিরতা দেখা গেছে, সাধারণতা এমনটা দেখা যায় না। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বেশিরভাগ বিদেশিরা হোল্ড করে। তারা (বিদেশিরা) যদি বিক্রি করে তাহলে চাপ আসতে পারে। তবে প্রকৃত ঘটনা কী, তা আমি জানি না।

এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম