কৃষি ও প্রকৃতি

যে কারণে নীলফামারীতে পাটের চাষ বেড়েছে

অতিবৃষ্টির কারণে গতবছরের চেয়ে নীলফামারীতে এবার পাটের চাষ কম হলেও ব্যাপক ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সোনালি আঁশ পাট চাষে কৃষকের লাভ বেশি হওয়ার পাশাপাশি পাট চাষে ঝুঁকি কম থাকায় কৃষকরা পাট চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। স্বল্প খরচ ও বেশি লাভের আশায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

Advertisement

এক সময় অর্থকারী ফসল হিসেবে নীলফামারী জেলায় পাটের চাষ বেশি হলেও দাম না থাকার পাশাপাশি পাটের পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় এখানকার কৃষকরা পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। গত কয়েক বছর ধরে পাটের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পাট দ্রব্য ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আবারও এটি চাষের ঝুঁকছেন কৃষকরা।

এখন অনেক জায়গায় পাট কাটা শুরু হলেও বেশিরভাগ জমির পাট কাটাতে আরও মাসখানেক বাকি আছে। তাই শেষ মুহূর্তে পাট ক্ষেত পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পাটচাষি রামকৃঞ্চ রায় জানান, চৈত্র মাসে জমি তৈরি করে বীজ বপন হয়।

বীজ বপনের পর আবারও জমিতে হাল দিয়ে সার ছিটানোর পর কয়েকদিনের মধ্যে গাছ গাজানো শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, প্রতি বিঘায় তিন পোয়া থেকে এক কেজি পর্যন্ত পাটের বীজ প্রয়োজন। দুই থেকে তিনবার পাট ক্ষেতে সার দিতে হয়।

Advertisement

হরিণচড়া এলাকার কৃষক সামিউল বাবু বলেন, পাটের দাম দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া পাট ঘড়ে তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। পাটের পাশাপাশি পাট খড়ির দামও প্রচুর ফলে কৃষকরা বেশি লাভবান হওয়ায় কারণে পাট চাষ করছেন। এবার দুই বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আরও কয়েকদিন লাগবে ক্ষেত থেকে পাট তুলতে। বিঘায় ৯ মণের মতো পাট হতে পারে বলে আশা করছি।

নীলফামারী সদর উপজেলার চত্তড়া বড়গাছা গ্রামের স্বপন জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন তিনি। দুই বিঘা জমির পাটের ফলন ভালো হলেও একটি ক্ষেতে পাটের গাছ ঠিকমত বাড়েনি। অতিবৃষ্টির কারণে এমনটি হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

তারপরও বিঘা প্রতি ৮ মণ করে পাট হবার সম্ভবনা রয়েছে। একই গ্রামের কাসেম জানান, দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন তিনি। ফলনও ভালো হয়েছে বাকি সময়টাতে রোগজীবাণু আক্রমণ না করলে ফলন ভালো হবে।

পাট চাষে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। তাছাড়া পাটের পাশাপাশি পাট খড়িও বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় পাট চাষে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

Advertisement

ডোমার সদরের পাটচাষি তফিজুল ইসলাম জানান, ফাল্গু ও চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাট বীজ বপন করার সময়। এই সময়ের মধ্যে সঠিক পদ্ধতিতে বীজ বপন ও পরিচর্যা করতে পারলে বিঘা প্রতি ১০ মণের বেশি পাটের ফলন হতে পারে। তাছাড়া বিঘাপ্রতি প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার পাট খড়িও বিক্রি করা সম্ভব। তিনি বলেন, গতবার ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করলেও এবার ৫০ শতক জমিতে পাটের আবাদ করেছেন।

সোনারায় ইউনিয়নের জামিরবাড়ি এলাকার সুরেশ জানান, ৪ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছেন তিনি। পাটের আবাদও ভালো হয়েছে। এখন ক্ষেত থেকে পাট গাছ তোলা হচ্ছে। এরপর পাতা ফেলার পরে পাট গাছে জাগ দেওয়া হবে। জাগ দেওয়ার জায়গাও প্রস্তুত করা হয়েছে।

পাট ব্যবসায়ী অসিম কুন্ডু জাগো নিউজকে জানান, গতবার পাটের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৪০০ টাকা। তবে প্রথম অবস্থায় পাটের মণ ছিল দুই হাজার টাকা করে। এবার বাজারে এখনো পাট উঠেনি। তবে পুরাতন পাট ২৭০০ টকা মণ দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী বিপুল ইসলাম জানান, বাজারে নতুন পাট উঠতে এখনো মাস খানেক লাগবে।

পুরাতন পাট ভালোটা ২৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গতবার সর্বোচ্চ ৩৪০০ টাকা করে পাটের মণ ছিল। বোড়াগাড়ী পারঘাটের কৃষক আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এই অঞ্চলের পাট এক সময় দেশের বড় বড় মিলগুলোতে যেত। এই এলাকার পাটের অনেক চাহিদা ছিল। খুলনা থেকে বড় বড় মিলের কোম্পানির লোকজন পাট কিনতে বছরের ১০ মাসেই এই এলাকায় পরে থাকত।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জাগো নিউজকে জানান, অতিবৃষ্টির কারণে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কম পাটের চাষ হয়েছে। এবার ৬৭১০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে জানিয়ে বলেন, কম আবাদ হলেও এবার ফলন ভালো হয়েছে। পাট চাষে কম ঝুঁকি ও লাভ বেশি হওয়ার কারণে নীলফামারীতে আগামীতে আরও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এমএমএফ/এমএস