হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলে লক্ষাধিক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। কয়েক লাখ মানুষ গেছেন উঁচু জায়গায় স্বজনদের বাড়িতে। বন্যার্তরা যথেষ্ট ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে কম ত্রাণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও একেকজনকে দেওয়া হচ্ছে ২-৫ কেজি। এছাড়া বাড়িঘর ছেড়ে যারা উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন তারা ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাস বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণের চালের বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। তাছাড়া একেকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় চালের ব্যাগ আছে ২০টি কিন্তু পরিবার ৪০টি। সেক্ষেত্রে দুজনকে একটি দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তিনি বলেন, যদিও এটি আইনবহির্ভূত, তারপরও নিরুপায় হয়েই আমাদের এভাবে বন্টন করে দিতে হচ্ছে।
চাল কম দেওয়ার কথা স্বীকার করে ইউপি মেম্বার মিষ্টলাল দাস বলেন, ‘আসলে আমরা পাই কম। কিন্তু বন্টন করতে হয় বেশি। সেক্ষেত্রে এক প্যাকেট চাল কয়েকজনকে বন্টন করেই দিতে হয়। এটি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।’
Advertisement
এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার রাজু চন্দ্র দাস জানান, কয়বার তার ইউনিয়নে ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে একবার মাত্র চেয়ারম্যান তাকে ২০ বস্তা চাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন। তিনি আর কোনো বরাদ্দ পাননি।
রাজু চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি কয়েকবার চেয়ারম্যানকে বলেছি কতবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বারবারই এড়িয়ে গেছেন। বলেছেন মিটিং করে জানানো হবে।’
বানিয়চং উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের পাঁচ কেজি করে দিচ্ছে। একটি ব্যাগ দুই পরিবারকে দিচ্ছে।
বিকাশ দাস নামের আরেকজন বলেন, ‘এখানে সরকারি কোনো ওষুধপত্র আসেনি। শুনেছি ৪ টন চাল ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু মানুষ চাল পেয়েছে কম। একেকজনকে ২-৫ কেজি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। আবার যারা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে অন্যের বাড়িতে বা উঁচু জায়গায় গিয়ে উঠেছেন তারা কিছুই পাচ্ছেন না।’
Advertisement
গীতা রানী দাস বলেন, ‘আমরা ৮ দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু শুধু আধাকেজি মুড়ি, আধাকেজি চিড়া, ৫ কেজি চাল পেয়েছি। আমাদের একেক পরিবারে ১০-১২ জন মানুষ। এতে আমাদের পোষাচ্ছে না।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মলয় কুমার দাস জানান, বানিয়াচং উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়নে বন্টনের জন্য এ পর্যন্ত ১২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে। দৌলতপুর ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে ৬ মেট্রিক টন। আরও ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, ‘বরাদ্দের চাল প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজির নিচে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভাগ করে দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এমন করে থাকেন আর সেটি প্রমাণিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি খবর নিয়েছি। আসলে বেশি সংখ্যক মানুষকে দিতে গিয়ে হয়তো তারা এমন করেছেন। এ এলাকায় প্রচুর মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। কাকে বাদ দেবেন। কাউকেই অভুক্ত রাখা যাবে না। তবে যদি এখানে কোনো দুর্নীতি পাওয়া যায় তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বানিয়াচং উপজেলার বন্যাকবলিত দৌলতপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাওরবেষ্টিত এ ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের সবগুলোই প্লাবিত হয়েছে। তবে দৌলতপুর, মুরাদপুর, আড়িয়ামুগুর, উমরপুর, করচা ও আলীপুর গ্রামের বন্যার অবস্থা বেশি খারাপ।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসআর/এএসএম