কার্পণ্য মানুষের স্বভাবজাত। সম্পদ ব্যয়ের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে ক্ষমা ও দয়ার ঘোষণা রয়েছে, তা অর্জন করতে হলে স্বভাবজাত কৃপণতা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের প্রয়োজনে, অন্যের প্রয়োজনে এবং ইবাদত তথা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নিজ উপার্জিত সম্পদ ব্যয় করতে হবে। কার্পণ্য যেমনই হোক, যে স্তরেরই হোক, তা নিন্দনীয়। কারণ মানুষের জীবনে সফলতা ও সমৃদ্ধির অন্তরায় হচ্ছে কৃপণতা। তাহলে সফলতা ও সমৃদ্ধির জন্য করণীয় কী?
Advertisement
কোরআনুল কারিমে মহান প্রভু সরলভাবে সম্পদ ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন এভাবে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ یَوْمٌ لَّا بَیْعٌ فِیْهِ وَ لَا خُلَّةٌ وَّ لَا شَفَاعَةٌ، وَ الْكٰفِرُوْنَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ
হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা ব্যয় কর; সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। আর কাফেররাই জালেম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৫৪)
Advertisement
কার্পণ্যই সফলতা ও সমৃদ্ধির অন্তরায়
আল্লাহ তাআলার কাছে শয়তান প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে, সে আদম সন্তানকে পদে পদে বিভ্রান্ত করবে। এর বাস্তবায়ন হিসেবেই বিভিন্ন সময় নানানভাবে সে মানুষকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে। শয়তান তার এ মিশন বাস্তবায়নে চক্রান্তের কোনো শেষ নেই। সুন্দরকে অসুন্দর আর অসুন্দরকে সুন্দর হিসেবে তুলে ধরতে সে সদা সচেষ্ট। কৃপণতাও এমনই একটি চক্রান্ত। মহান আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-
اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ، وَ اللهُ یَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَ فَضْلًا ، وَ اللهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ
‘শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং তোমাদেরকে কার্পণ্যের আদেশ করে। অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৮)
Advertisement
সম্পদ ব্যয়ের নির্দেশনা
মহান রবের নির্দেশনা খুবই সরল। তিনি মানুষকে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘সম্পদ ব্যয় করলে তিনি অনুগ্রহ করে সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন। অথচ শয়তান মানুষকে ভিন্ন প্ররোচনা দেয়। বিতাড়িত শয়তান মানুষকে এ বলে ধোঁকা দেয়- যদি সম্পদ ব্যয় করে ফেল, তাহলে তো গরিব হয়ে পড়বে; তাই নিজ সম্পদকে আঁকড়ে ধরো, কৃপণতা অবলম্বন কর!
মনে রাখতে হবে
কৃপণতা হচ্ছে শয়তানের একটি হাতিয়ার, যা দিয়ে সে মানুষকে সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়। শয়তানের এ ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কোরআনের বিধান মতে আল্লাহর পথে খচর করতে হবে। তবেই মুমিন হবে সফল। সম্পদে সমৃদ্ধ হবে। মুমিনের সম্পদ ব্যয় কেমন হবে তার একটা নির্দেশনা কোরআনে পাকে এভাবে এসেছে-
وَ مَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللٰهِ، وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ یُّوَفَّ اِلَیْكُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ
তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই (সম্পদ) ব্যয় করে থাক। আর যে সম্পদই তোমরা ব্যয় কর তোমাদেরকে তার প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭২)
মুমিন নানান প্রয়োজনে সম্পদ ব্যয় করে। কখনো ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন মেটাতে সম্পদ ব্যয় করে। আবার কখনো সামাজিক প্রয়োজন মেটাতেও সম্পদ ব্যয় করে। ধর্মীয় ইবাদত-বন্দেগিতেও সম্পদ ব্যয় করতে হয়। যাকাত, ফেতরা, হজ, কোরবানিসহ নানান ধর্মীয় খাতে সম্পদ ব্যয় করে থাকে। এ সব সম্পদ ব্যয় যদি বিশুদ্ধ নিয়তে হয় তবে তা নিঃসন্দেহে তার জন্য পুণ্য বয়ে আনতে পারে। সমৃদ্ধি ও সফলতা বয়ে আনতে পারে। কল্যাণের কাজে সম্পদ ব্যয়ের প্রতিফল দেওয়ার ব্যাপারে কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বলেন-
وَ مَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللٰهِ، وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ یُّوَفَّ اِلَیْكُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ.
‘তোমরা তো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই (সম্পদ) ব্যয় করে থাক। আর যে সম্পদই তোমরা ব্যয় করো তোমাদেরকে তার প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭২)
সম্পদ ব্যয়ের নির্দেশনার পাশাপাশি কার্পণ্য সম্পর্কেও সাবধান করা হয়েছে। কোরআনে পাকে এসেছে-
وَ اُحْضِرَتِ الْاَنْفُسُ الشُّحَّ.
‘এবং মানুষ লোভহেতু স্বভাবত কৃপণ।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১২৮)
মানুষ আল্লাহর পথে সম্পদ খরচ করতে কৃপণতা করে। অথচ সব সম্পদ মহান প্রভুর অনুগ্রহ ও দান। কোনো মুমিনই তা অস্বীকার করতে পারে না। কোরআনুল কারিমের আয়াতেও মহান আল্লাহ সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন এভাবে-
اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰكُمْ
‘আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো।’
শুধু তা-ই নয়,
কী পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করতে হবে। সে নির্দেশনাও এসেছে কোরআনের ঘোষণায়-
وَ لَا تَجْعَلْ یَدَكَ مَغْلُوْلَةً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا.
‘তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’ (সুরা বনি-ইসরাঈল : আয়াত ২৯)
وَ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا
‘যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৭)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সফলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসলামের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণের পথে ব্যয় করা। আবার ব্যয়ের নামে অপব্যয় ও অপচয় থেকে বিরত থাকার প্রতিও সতর্ক থাকা জরুরি।
সম্পদ ব্যয়ের উপযুক্ত ক্ষেত্রে যেমন হাত গুটিয়ে রাখা যাবে না, আবার যত সম্পদ আছে তার সবই দান করে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে কার্পণ্যও করা যাবে না, অপ্রয়োজনে ব্যয় করে সম্পদের অপচয়ও করা যাবে না। স্বভাবধর্ম ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়, তেমনি সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা-অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে যথাস্থানে উপযুক্ত ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। অযথা কিংবা পুরো সম্পদ দান করে নিঃস্ব হওয়া থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। ইসলামের যথাযথ দিকনির্দেশনা মেনে কল্যাণের পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস