মানুষ শুধু খাবারের জন্য বাঁচে না। তবে এর অভাবে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। নানামুখী সংকটের ফলে দেখা দিয়েছিল আরব বসন্ত। বর্তমানেও দেশে দেশে একই ধরনের সংকট চলছে। যার মধ্যে খাদ্য সংকট অন্যতম। আরব বসন্তের আন্দোলনে চারজন প্রেসিডেন্টকে সরে যেতে হয়েছিল। সে সময় সিরিয়া ও লিবিয়ায় দেখ দেয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সময়ে এসে ইউক্রেনে হামলা করে বসলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে বিশ্বজুড়ে চরম খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চলতি বছর বিভিন্ন দেশে অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা অপরিহার্য।
Advertisement
মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক দিক হলো জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। যদি আসবাবপত্র ও মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে যায় তাহলে মানুষ কেনা-কাটা বাদ দিতে পারে অথবা বিলম্বে কিনতে পারে। কিন্তু মানুষ খাওয়া বন্ধ করতে পারে না। একইভাবে পরিবহণ খরচও মানুষকে ভোগায়। যখন খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, জীবনযাত্রার মান তখন হঠাৎ করে পড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে গরিব দেশগুলোর শহরে বসবাস করা মানুষ। খাবার ও পরিবহনখাতে তাদের আয়ের বড় একটা অংশ ব্যয় করতে হয়। তবে এই মানুষরা শস্য উৎপাদন করতে না পারলেও বিক্ষোভ-আন্দোলন করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক দেশের সরকার মানুষের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছে। তবে করোনা মহামারির পরে দেশগুলো নগদ অর্থ সংকট ও ঋণে জর্জরিত হয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোতে গড়ে জিডিপির অনুপাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ, যা বেড়েই চলছে। এদিকে দরিদ্র দেশগুলোকে উচ্চ হারে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ৪১টি দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কা এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধেও ব্যর্থ হচ্ছে। এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের তীব্র আন্দোলনের মখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুতেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে, ভারতে সম্প্রতি অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া পাকিস্তানে মুদ্রা বাঁচাতে কম চা খেতে বলা হয়েছে। লাওসও ঋণ-খেলাপির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় কম্বোডিয়ার জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়েছে।
Advertisement
দ্য ইকোনমিস্ট খাদ্য-জ্বালানির মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করার জন্য একটি পরিসংখ্যানগত মডেল তৈরি করেছে। যেকোনো ধরনের গণ আন্দোলন, দাঙ্গা ও রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মুখ্য ভূমিকায় থাকে। ইকোনমিস্টের এই মডেল যদি সত্যি হয় তাহলে চলতি বছরে অনেক দেশেই সহিংসতা দেখা দেবে।
সংকটের কারণে অনেক দেশ এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে। এর মধ্য অন্যতম হলো জর্ডান ও মিশর। দেশ দুইটি খাদ্য ও জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভরশীল। অনেক দেশের সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সরবরাহ সংকটে তুরস্কের মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। অনেক নাগরিকরা মনে করছেন আন্দোলন করলে তাদের হারানোর কিছু নেই।
ঘুষ-দুর্নীতিও সমাজকে অস্থিতিশীল করতে পারে। পণ্যের মূল্যর সঙ্গে যখন আয়ের সঙ্গতি না থাকে তখন অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়াতে পারে। নিম্ন শ্রেণীর মানুষ শোষণের শিকার হতে পারে। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তিউনিশিয়ায় চরম বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত।
চলতি বছরে যদি বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে দাঙ্গা কিংবা বিপ্লব পছন্দ নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে জিডিপি কমে যায়।
Advertisement
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন শাহিন মিয়া
এমএসএম/জিকেএস