পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাত্রার শুরুর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ঝুঁকি ও কষ্টের অবসান ঘটলো শরীয়তপুরের যাত্রীদের। পদ্মা সেতু দিয়ে এ যাত্রা হবে স্বস্তি ও আনন্দের।
Advertisement
রোববার (২৬ জুন) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে শরীয়তপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে স্বস্তির যাত্রা শুরু করে ১৫টি চেয়ার কোচ। প্রতিটি বাসের যাত্রি ধারণ ক্ষমতা ৪২ জন। পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথম যাত্রার সঙ্গী হতে দুই সহস্রাধিক যাত্রী সমাগম হলেও স্বপ্নযাত্রায় যোগ দিতে পেরেছেন ৬৩০ জন। বাকিদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিনের।
যাত্রীরা বলছেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুর থেকে প্রথম দিনের যাত্রী হতে পারাটা গৌরবের। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি, শরীয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি এক্সপ্রেস নামে প্রস্তুত হয়েছে বিলাসবহুল এসব বাস।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় শরীয়তপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে নবযাত্রার উদ্বোধন করেন শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু বেপারী, শরীয়তপুর আন্তঃ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ চৌকিদার, সহ-সভাপতি মো. জালাল মাঝিসহ অন্যান্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
Advertisement
শরীয়তপুর পৌরসভার পশ্চিম কোটাপাড়া গ্রামের আলী আহমেদ খান (৭৬) জাগো নিউজকে বলেন, সেতুর ওপর দিয়ে আরামদায়ক গাড়িতে চড়ে ঢাকার উদ্দেশে নিরাপদ যাত্রা ছিল স্বপ্নের মতো। আমি প্রথম বাসের যাত্রী হতে পেরে আনন্দে আত্মহারা। এ যে কী আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না।
শরীয়তপুর পৌরসভার উত্তর পালং গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারা মোল্লা (৫২) জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত আমাদের ঢাকা যাওয়া ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টদায়ক ভ্রমণ। কিন্তু তা এখন কেবলই স্মৃতি। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাওয়া এখন স্বপ্ন ভ্রমণ। আমরা বিগত প্রায় ৩৫ বছরের কষ্টের যাত্রা ভুলে গেছি।
শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী প্রথম বাসের চালক দেলোয়ার হোসেন (৪৫) জাগো নিউজকে বলেন, শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছি বাস চালিয়ে। আমার বাসে ৪২ জন যাত্রী। আজ আমি বাস নিয়ে পদ্মা সেতু পার হবো। এটা গৌরবের মনে হচ্ছে।
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ চৌকিদার জাগো নিউজকে বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় থেকে দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক অতিকষ্টে জীবন যাপন করছে। সংকটের কারণে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য পেশায়। আজ পদ্মা সেতুর হাত ধরে সেই শ্রমিক ভাইয়েরা ফিরে পাবে নতুন জীবন। পাল্টে যাবে তাদের জীবনযাত্রার মান। এ মহান কীর্তির অগ্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শরীয়তপুরের সকল পরিবহন শ্রমিকের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।
Advertisement
শরীয়তপুর পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ভগ্নদশায় থাকা শরীয়তপুরের পরিবহন খাত আজ পদ্মা সেতুর বদৌলতে পুনর্জন্ম পেল। এ যে কী আনন্দের ও স্বস্তির তা কেবল আমরা মালিকপক্ষই শুধু অনুভব করছি না, এ স্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে জেলার প্রতিটি যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিকের মাঝে।
এফএ/এমএস