‘হাতের পাঁচ আঙুল সমান নয়। সাধারণ মানুষের মতো হিজড়াদের মধ্যেও ভালো-মন্দ রয়েছে। হিজড়াদের কালচারের মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে। কেউ যদি সাধারণ মানুষকে হয়রানি কিংবা লাঞ্ছিত করেন তবে তাদের আইনের আওতায় আনুন। আমরাও তাদের বিচার চাই।’জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে নিজেদের সম্প্রদায়ের কিছু অসৎ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন ঝুলি হিজড়া ওরফে মাসুমা। ঝুলির বাড়ি বনানীর কড়াইল বস্তিতে।জাতীয় এইডস ও সেক্সুয়ালিটি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (এসটিডি) কর্মসূচির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট হিজড়ার সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী, এই সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার। শুধু ঢাকা শহরে হিজড়ার সংখ্যা ১০ হাজারের উপরে। বাংলাদেশের কোনো আদমশুমারিতে হিজড়াদের গণনার কোনো ঘর না থাকায় এ পর্যন্ত তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি।প্রায়শই সড়কে হিজড়াদের বিরুদ্ধে মানুষকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। গায়ে হাত দিয়ে টাকা নেন অনেকে। যারা একটু দুর্বল তাদের আরও পেয়ে বসেন তারা। পকেট থেকে ১০০-৫০০ টাকার নোট যা পায় তা’ই হাতিয়ে নেয় তারা।এদের বিষয়ে ঝুলি হিজড়া বলেন, ‘হিজড়ারা এমনি সমাজ থেকে বঞ্চিত। সমাজের বেশিরভাগ লোক আমাদের মানুষ মনে করে না, তাড়িয়ে দেয়। হিজড়াদের আয়-রোজগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। কেউ কাজেও নেয় না। মানুষের দেয়া ভিক্ষায় আমরা জীবন-যাপন করি। তবে কেউ যদি টাকা তোলার নামে কাউকে হয়রানি কিংবা লাঞ্ছিত করে থাকে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের বিচার হোক। এমন কাজ করলে তারা নিশ্চয়ই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’তবে যারা হিজড়া-বেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা ট্র্যাফিক সিগন্যাল থেকে টাকা তোলেন তাদের অনেকেই প্রকৃত হিজড়া নয়। এদের অধিকাংশই পুরুষ। তারা বিনাশ্রমে অর্থ উপার্জনের জন্য হিজড়া সেজে মানুষকে হয়রানি-চাঁদাবাজি করেন বলে দাবি ঝুলির।তিনি বলেন, ‘অনেকেই পুরুষ থেকে অপারেশনের মাধ্যমে নিজেদের বেশ স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করেছে। তারা পুলিশ সদস্যদেরকে টাকা দিয়ে মানুষ থেকে টাকা তোলে। মানুষকে লাঞ্ছিত করে প্রকৃত হিজড়াদের ইমেজ নষ্ট করছে নকল হিজড়ারা। আমরা চাই এসব নকল হিজড়াদের শনাক্ত করে শাস্তি দেয়া হক।’সরকারের কাছে কিছু চাওয়ার আছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ঝুলি বলেন, ‘আমরা চাই সরকারের সুযোগ-সুবিধা, আইন সবার জন্য এক হোক। আমরাও অন্য পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো চলতে চাই। আমাদের চাকরি দিন, পুনর্বাসন করে দিন। কথা দিচ্ছি কারো সঙ্গে বেয়াদবি করবো না।’হিজড়ারা বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা কালেকশনের মাধ্যমে যে টাকা আয় করে এর ৫০ শতাংশ দিয়ে হয় ওই এলাকার হিজড়া সরদারকে। কিছু অংশ পুলিশকে দিয়ে বাকিটা আমরা নিই। কালেকশন বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের জমি-জমা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।সরকারের কাছে আমাদের আবেদন কিছু কিছু পুলিশ নকল হিজড়াদের থেকে অর্থ নিয়ে তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেন ঝুলি।এআর/এসকেডি/বিএ
Advertisement