পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটলো আজ। শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এ ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার হাতেই ২০০১ সালের ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এ মেগা প্রকল্পের।
Advertisement
এর আগে হেলিকপ্টারযোগে সকাল ১০টায় মুন্সিগঞ্জের দোগাছি পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়া-১ এ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। বক্তব্য শেষে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে গাড়িবহর নিয়ে সেতুতে টোল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাবেশে অংশ নেন সাড়ে ৩ হাজার সুধীজন। যাদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংবাদিকরা। সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করেন।
এদিকে সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও ফলক উন্মোচন ও মোনাজাত করবেন। পরে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নেবেন তিনি।
Advertisement
অন্যদিকে সেতু উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনে মাওয়া এলাকাজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌপুলিশ, র্যাবসহ সবাই একযোগে মোতায়েন রয়েছে। ইউনিফর্মে এবং সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। বিভিন্ন পেট্রোলিং ছাড়াও আকাশপথে রয়েছে হেলিকপ্টারের নজরদারি।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাওয়া এলাকায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনে দোকানপাট ও সাধারণ যানবাহন চলাচল। বন্ধ রয়েছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটের নৌযান চলাচলও।
রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
Advertisement
পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
আরাফাত রায়হান সাকিব/মোবাশ্বির শ্রাবণ/রাশেদুল ইসলাম রাজু/এসজে/এএসএম