পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে শরীয়তপুরের ১৩ লাখ মানুষের মধ্যে আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। গৌরবময় মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে উদ্বোধনী জনসভায় গেছেন জেলার লাখো মানুষ।
Advertisement
ইতিহাসের সাক্ষী হতে নানা সাজে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে শনিবার (২৫ জুন) ভোর থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাটের জনসভাস্থলের দিকে যেতে থাকেন তারা।
জাজিরা উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান চুন্নু মাদবর বলেন, ‘এ উপজেলার সব বয়সের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। তিন হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেল, ১০০ বাস, ৪০টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক ট্রলারযোগে যাত্রা করেছি বাংলাবাজার জনসভাস্থলে। সকাল ৬টায় জাজিরা উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, বাস, ট্রাকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আমরা ছুটে চলেছি। শেষ রাত থেকেই লঞ্চ ও ট্রলারযোগে মানুষ আসছে জনসভায় যোগ দিতে।’
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা হতে যাচ্ছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী অন্যতম গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন পরবর্তী জনসভায় উপস্থিত হয়ে যেমন বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস রচনা করবেন, তেমনি আমরাও হয়ে যাবো মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী। আবেগতাড়িত হয়ে গত রাতে আমরা আওয়ামী পরিবারের লোক ঘুমাতে পারিনি। আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোর থেকেই আমরা জড়ো হতে থাকি শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমি মাঠে। শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে ছয় হাজার মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে সুসজ্জিত হয়ে সকাল ছয়টায় জনসভাস্থলের দিকে রওনা করি।’
Advertisement
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘এ পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা, সাহস ও পরামর্শে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার গুটি কয়েক মানুষকে নিয়ে প্রথম পথচলা শুরু করি। শুরুর দিকে এ অসম্ভব বিষয়কে বাস্তবায়নের দাবি তোলায় তখন অনেকেই আমাকে পাগল আখ্যায়িত করেছিলেন। সময়ের ব্যবধানে আজ যখন আমি সেই ইতিহাসের অংশীদার হতে যাচ্ছি এ আনন্দ ও তৃপ্তি প্রকাশের ভাষা আমার নেই।’
বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর সড়ক পথ রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে সব ধরনের যানচলাচল শুরু হবে।
২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
Advertisement
পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
মো. ছগির হোসেন/এসজে/এমএস