জাতীয়

পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন যাবে ২০২৩ সালের জুনে

২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ঠিক এক বছর পর ২০২৩ সালের জুন মাসে উদ্বোধন হবে ‘পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প’। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথ যাবে যশোরে। এই রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২৩ কিলোমিটার হবে পুরোপুরি এলিভেটেড (উড়াল)। যশোর পর্যন্ত রেলপথের কোথাও থাকবে না কোনো লেভেল ক্রসিং। এতে সময় বাঁচবে, ঘটবে না দুর্ঘটনা। দেশে উড়াল ও লেভেল ক্রসিংবিহীন প্রথম রেলপথ হতে চলেছে এটি।

Advertisement

সেতুর পাশাপাশি পুরোদমে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজও। এজন্য ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২৩ সালের জুন মাসে খুলে দিতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চায়নার ঋণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ এবং সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। মোট গড় অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে ভাঙা অংশ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কাজ চলছে মোট তিনটি ফেজে ভাগ হয়ে। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ। এছাড়া মাওয়া-ভাঙ্গা ৭৮ দশমিক ৫ ও ভাঙ্গা থেকে যশোরের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন মাসে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ওয়ে অ্যান্ড ওয়ার্ক) আবু ইউসুফ মোহাম্মদ শামীম জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। আমরা দুটি ভাগে বিভক্ত করে প্রকল্পটি উদ্বোধন করবো। ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২৩ সালের জুন মাসে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এই অংশটুকু চালু করতে পারবো, কাজের অগ্রগতিও ভালো।’

যশোর পর্যন্ত কবে নাগাদ চালু হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। আশা করছি ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত এই মেয়াদে চালু করতে পারবো।’

Advertisement

১০০টি ব্রডগেজ কোচ সংগ্রহপ্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এই রেলপথে চলাচলের জন্য সংগ্রহ করা হবে ১০০টি ব্রডগেজ রেল কোচ। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে অধিগ্রহণ করা হবে ২ হাজার ৪২৬ একর ভূমি।

ব্যালাস্টলেস উড়ালপথে রেলের গতি ১২০ কিমিবাংলাদেশের রেলপথ মানেই ব্যালাস্ট্রেড। এই রেলপথে গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয়। থাকে ইস্পাতের স্লিপার ও কাঠের বন্ধন। রেললাইনে পাথর দেওয়ার কারণ হচ্ছে যাতে ট্রেন লাইনচ্যুত না হয়। তবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগের উড়ালপথে কোনো পাথর থাকবে না। অত্যাধুনিক এই উড়াল রেলপথে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে ট্রেন।

ঢাকা-যশোর রুটে অত্যাধুনিক ২০ স্টেশনকমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রুটে ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই হবে নতুন। পুরোনো ছয়টি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের নিমতলায় নতুন দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর নির্মাণ করা হবে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন। মাওয়া স্টেশনটি হবে তুলনামূলক বেশি নান্দনিক। প্রকল্প অনুযায়ী, দূর থেকে এটাকে দেখলে কোনো উন্নতমানের শপিংমল মনে হবে।

পদ্মা স্টেশনের পরে শরীয়তপুরে হবে ‘শিবচর স্টেশন’। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উন্নত দেশের আদলে নির্মাণ করা হবে জংশন। ভাঙ্গা থেকে একটি লুপ ফরিদপুর সদর ও অন্য লুপ নাগরকান্দায় গেছে। তবে প্রকল্পের আওতায় নাগরকান্দায় স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর গোপালগঞ্জের মকসুদপুর ও মহেশপুরে নির্মিত হবে রেলস্টেশন। তারপর নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদরে স্টেশন করা হবে। এরপর যশোরের জামদিয়া ও পদ্মবিলে নির্মাণ করা হবে দুটি নতুন স্টেশন।

Advertisement

ঢেলে সাজানো হবে ছয় স্টেশনপ্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ছয়টি রেলস্টেশন ঢেলে সাজানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনও। এছাড়া গেন্ডারিয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে। সংস্কারের জন্য নির্ধারিত অন্য তিনটি স্টেশন পড়ছে সেতুর ওপারে। সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, যশোরের সিংগাই ও রূপদিয়া স্টেশন। বিদ্যমান এসব স্টেশন নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে।

১০ স্টেশনে আবাসিক ভবনরেলস্টেশনের স্টাফসহ অন্যদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ১০টি স্টেশনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত রেসিডেন্স বিল্ডিং বা আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হবে। এ স্টেশনগুলো হলো— নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, লোহাগড়া, জামদিয়া, নড়াইল ও পদ্মবিল জংশন।

দীর্ঘপথে থাকছে না লেভেল ক্রসিংবাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে ৯৭৮টি অনুমোদিত এবং ২৭১টি অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২২১টিতে রয়েছে গেটকিপার। ফলে ১ হাজার ২৮টি লেভেল ক্রসিং রয়ে গেছে অরক্ষিত। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানি। তবে ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে থাকছে না কোনো লেভেল ক্রসিং। এতে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটবে না, অন্যদিকে সড়কেও পড়বে না জটলা। ক্রসিং এড়াতে কোথাও কালভার্ট, আন্ডারপাস ও রেলওয়ে ওভারপাস নির্মিত হবে। ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস নির্মিত হবে। রেলপথটি শতভাগ নিরাপদ করতেই এমন উদ্যোগ।

এমওএস/এএসএ/এমএস