একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার রাজাকার মুকিত মনির ওরফে মুকিত মিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি পেশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় সাক্ষী।
Advertisement
বুধবার (২২ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে এ জবানবন্দি নেওয়া হয়।
এ দিন দুই বীরাঙ্গনা ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- শাল্লার দৌলতপুরের দাউদপুর গ্রামের জামিলা এবং দিরাই উপজেলার পেরুড়া বক্তারপুর গ্রামের কুলসুম বিবি।
জবানবন্দি শেষে সাক্ষীদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ আগস্ট এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
Advertisement
জবানবন্দিতে প্রথম সাক্ষী বীরাঙ্গনা জামিলা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ অগ্রহায়ণ বাবা-মাসহ বসতবাড়িতে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। অবিবাহিত ছিলেন তিনি। ভোররাত আনুমানিক ৪টার দিকে মুকিত, তোতা টেইলর, তোতন মাস্টার, কদর, জোবায়ের মনির, প্রদীপ মনির ও জাকির হোসেনসহ অনেকে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে।
এরপর তারা ঘরে ঢুকে বাবা-মা, ভাই দুলাল ও তাকে ধরে নিয়ে প্রতিবেশি আপ্তর আলীর বাড়ির উঠানে যায়। সেখানে আপ্তর, আজিজ, আতিব, বোচন ও ইয়াকিনকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় আব্দুর রহিম, নওয়াব আলী, কুদ্দুস ও বৈকণ্ঠ ভয়ে পালিয়ে যান।
এরপর মুকিত ও কদর তাকে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাজাকাররা বাড়িঘরে লুটপাট করে এবং মুক্তা, পেয়ারা ও জাহেরাকে ধরে শ্যামচর বাজারের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তারা কুলসুম নামে একজনকে আটক অবস্থায় পান। ওই ক্যাম্পে সপ্তাহখানেক আটকে রেখে তাদের সবাইকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প থেকে তাদের উদ্ধার করে।
এ ঘটনার ১৫-১৬ দিন পর মুক্তা জানায়, ধর্ষণের ফলে সে অন্তঃসত্ত্বা। পরবর্তীতে মুক্তার একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় হালিমা।
Advertisement
এরপর ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় প্রত্যক্ষ সাক্ষী কুলসুম বিবি তার জবানবন্দিতে বলেন, ১৭ অগ্রহায়ণ আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে রাজাকার মুকিত, হাসিম মাস্টার, জোবায়ের মনির, প্রদীপ, কদর, জাকির হোসেন, সিদ্দিক, তোতা টেইলর, তোতন মাস্টার, জলিল ও রশিদের নেতৃত্বে অন্তত ১০০ জন আমাদের গ্রাম ঘেরাও করে।
স্বামীর বাড়িতে ছিলাম আমি। রাজাকাররা রামা মাস্টার, চিত্তরঞ্জন ও তার মা কালী সুখলালসহ সাত-আটজনকে ধরে সুরমা নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। আর এই হত্যাযজ্ঞ বাড়ির পাশের জঙ্গলে পালিয়ে থেকে স্বামীসহ দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান কুলসুম বিবি।
তিনি আরও বলেন, একই দিন দুপুর ১২টার দিকে রাজাকাররা পেরুড়া গ্রামের অন্য একটি হিন্দুপাড়ার পুরুষ, নারী ও শিশুসহ ৩০-৪০ জনকে ধরে নিয়ে জোর করে মুসলমান বানায়। এরপর পুরুষদের গুলি করে হত্যার পর লাশ সুরমা নদীতে ফেলে দেয়।
টের পেয়ে রাজাকাররা জঙ্গল থেকে স্বামীসহ কুলসুমকে ধরে সুরমা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে স্বামীকে গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। কুলসুমকে আটক করে শ্যামাচর বাজার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে মুক্তা, পেয়ারা ও জাহেরাকে দেখতে পান কুলসুম। এরপর রাজাকাররা ক্যাম্পে আটক রেখে তাদের ধর্ষণ করে। ছয় দিন পর মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প থেকে তাদের উদ্ধার করেন।
এফএইচ/এমপি