যে প্রবল বৃষ্টিপাত বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে তার সম্ভাব্য কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মৌসুমী বৃষ্টিপাত যদিও প্রাকৃতিক বায়ুমণ্ডলীয় প্যাটার্ন অনুসরণ করে, তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এটি আরও অনিশ্চিত ও প্রবল হয়ে উঠছে।
Advertisement
বুধবার (২২ জুন) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে গত সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিপাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা কতটুকু ছিল, তা নির্ণয়ে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, উষ্ণ বাতাসে মেঘ আরও বেশি জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত আরও বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেন, বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী মৌসুমী বায়ু অনেক বেশি আর্দ্রতা বহন করতে পারে। আমরা এখন যে বিপুল বৃষ্টিপাত দেখছি, তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হতে পারে।
Advertisement
দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে এল নিনো-লা নিনা আবহাওয়া চক্র, ভারত মহাসাগরীয় ডাইপোলসহ মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের একাধিক ওভারল্যাপিং প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। এই সিস্টেমগুলো বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে শক্তিশালী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বায়ু প্রবাহিত করছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মৌসুমী বায়ুর ধরন বদলে গেছে। কারণ ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা কমপক্ষে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোল বলেন, বর্ষা মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে আমরা অনিয়মিত বিরতিতে সংক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ শুকনো মৌসুম দেখতে পাচ্ছি। যখন বৃষ্টি হচ্ছে, এটি কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে সমস্ত আর্দ্রতা ঢেলে দিচ্ছে।
রয়টাসের্র তথ্যমতে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় অন্তত ৯৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবারও দেশের সামরিক বাহিনী ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহার করে উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি দুর্গতদের মধ্যে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিয়েছে। এই দুর্যোগে অন্তত ৬৯ জন মারা গেছেন বলে দাবি করেছে বার্তা সংস্থাটি, যদিও বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৬ জন।
Advertisement
গত সপ্তাহের ভারী বর্ষণে বাংলাদেশের নদীগুলোতে পানি উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর কিছু দিন আগে প্রতিবেশী ভারতের আসাম রাজ্যেও একই ধরনের বৃষ্টি-সৃষ্ট বন্যা দেখা দেয়, যাতে কমপক্ষে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয় বাংলাদেশকে। বিশ্বব্যাংক ইনস্টিটিউটের ২০১৫ সালের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রতি বছর এ দেশের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। এই দুর্যোগ দেশের কৃষি, অবকাঠামো ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যান্ডারস লেভারম্যান বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বৃষ্টিপাত না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বেশি বৃষ্টিপাত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের প্রয়োজন অবিরাম বৃষ্টিপাত, যেমনটি অতীতে হতো। কিন্তু এখন তারা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হুমকির সম্মুখীন।
কেএএ/এমএস