৯৫ বছর বয়সী শহর আলী শেখ বাগেরহাটের রামপাল এলাকার বাসিন্দা। নেত্রনালী সমস্যা থাকার কারণে বেঁচে ছিলেন অনেকটা না বাঁচার মতোই। হতদরিদ্র পরিবারে এই বৃদ্ধের চিকিৎসায় অর্থ যোগানোর সাধ্য ছিলনা সন্তানদের। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকা এই বৃদ্ধের অবশেষে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে নেত্রনালী অপারেশন হয়েছে। ভালোই আছেন তিনি। একই এলাকার ৯০ বছর বয়সী শেখ সৈয়দ আলীর ছানি অপারেশনও সম্পন্ন হয়েছে এখানে। মংলার সাহেবেরমেঠ গ্রামের বাঁধন নামে ৫ বছরের একটি অসহায় শিশু মায়ের সঙ্গে এসেছে। এ বছর তার বাম চোখের অপারেশন হয়েছে। সে জন্মের দুই বছর পর থেকে ঠিকমত দেখতে পেত না। এখন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এ রকম ৬ শতাধিক চক্ষু রোগীকে ঢাকায় নিয়ে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে দিয়েছেন ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। এসব রোগীদের চিকিৎসা খরচ তো লাগেইনি, উল্টো আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার পর প্রত্যেকেই হাত খরচের টাকাও পেয়েছেন। এটা শুধু বাগেরহাটের রামপাল-মংলা এলাকার চিত্রই নয় গত ৭ বছর ধরে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের হাজার হাজার লোক এভাবেই উপকৃত হচ্ছেন। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের আলহাজ শেখ আব্দুর রহমান ও আলহাজ সখিনা বেগম দম্পতির এই সন্তানটি শিক্ষা, সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবকিছুতে অন্য অনেককে ছাড়িয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে সর্বশেষ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে পরবর্তীতে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জনের পর ড. ফরিদ ১৯৯২ সালে সিঙ্গাপুরের জাতীয় শিপিং কোম্পানি ’নেপচুন ওরিয়েন্ট লাইন্স’ এ চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরি করে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা যাবে না বলে ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মানবসেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মানবসেবীর বিচরণ রয়েছে। চক্ষু রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি দরিদ্রদের সহায়তা, গরিব ছাত্রদের লেখাপড়া চালানো, মসজিদ নির্মাণসহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। বিগত ২০০৯ সাল থেকেই সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন এই নিভৃতচারী মানবপ্রেমিক। এ পর্যন্ত নেত্রনালী, মাংস বৃদ্ধি, টেরিজম (ট্যারা রোগ) ও ছানি অপারেশন করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগীর। এছাড়া আরও হাজার হাজার রোগীকে মাঠে ক্যাম্প পরিচালনার মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ড. ফরিদ জানান, প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকায় আইক্যাম্প পরিচালনা করা হয়ে থাকে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানোর সুবাধে হাজার হাজার রোগী নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে চলে আসেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। যাদের অপারেশন প্রয়োজন হয় তাদের তালিকা হয় এই ক্যাম্পেই রয়েছে। পরে তাদের ঢাকায় লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে এনে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। এজন্য প্রতি বছরই খরচ হয় লাখ-লাখ টাকা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে এই মানব প্রেমিকের। অপারেশন হওয়া ৬ শতাধিক চক্ষু রোগীদের পাশে বসে কারো মাথায় হাত বুলাচ্ছেন, কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা খোঁজ- খবর নিচ্ছেন। ওষুধ, খাবার ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা জেনে নিচ্ছেন। অপারেশনের পর রোগীদের কি করণীয় তাও বলে দিচ্ছেন তিনি। এভাবে করে চলেছেন অসহায়ের সেবা।শওকত আলী বাবু/এসএস/এমএস
Advertisement