বর্তমানে অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন ছোট-বড় কমবেশি সবাই! ওজন যতটা সহজে বেড়ে যায়, তা কমানো ততটাই কঠিন। ওজন কমাতে হলে ডায়েটে পরিবর্তন ও শরীরচর্চা অপরিহার্য, এ বিষয় সবারই জানা। তবে কোন সময় শরীরচর্চা করলে সবচেয়ে বেশি সুফল মেলে তা অনেকেরই হয়তো অজানা।
Advertisement
বিজ্ঞান বলছে, সকালের একটি ছোট অভ্যাস আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে ও ওজন কমাবে দ্রুত। আর সেই একটি অভ্যাস হলো সকালের নাস্তা খাওয়ার আগে মাঝারি ব্যায়াম করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় সকালের শরীরচর্চা বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের ২০১৭ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যেসব স্থূল পুরুষ সকালের নাস্তার পর হাঁটেন তাদের তুলনায় যারা নাস্তার আগে হেঁটেছেন তাদের সঞ্চিত চর্বি বেশি পরিমাণে বার্ন হয়েছে।
২০২০ সালের অন্য এক সমীক্ষারও একই রকম ফলাফল ছিল। সকালের নাস্তার আগে ব্যায়াম করা অংশগ্রহণকারীরা খাবারের পরে ব্যায়ামকারীদের তুলনায় দ্বিগুণ চর্বি পোড়ায়।
Advertisement
সকালে খালি পেটে হাঁটা বা শরীরচর্চা করলে কীভাবে ওজন কমে? কারণ সকালে ভালো ঘুমের পর আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। গ্লাইকোজেন স্টোর, লিভারে সঞ্চিত কার্বোহাইড্রেট ও ব্যায়ামের সময় যে পেশি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলোও কম থাকে।
তাই আপনি যখন সকালে কিছু না খেয়ে ব্যায়াম করেন, তখন শরীরে জমানো শর্করা গ্লাইকোজেনের মাধ্যমে পুড়ে যায়। তারপর এটি শরীরে সঞ্চিত চর্বি পোড়াতে শুরু করে। এ কারণে আপনাকে অতিরিক্ত ওজন কমতে শুরু করে।
শুধু ওজন কমাতেই নয়, বরং সকালের শরীরচর্চা মস্তিষ্কেরও উন্নতি ঘটায়। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে ৩০ মিনিটের মাঝারি শরীরচর্চা যেমন- দ্রুত হাঁটা বা কার্ডিও করার ফলে আপনি আরও বুদ্ধিমান হবেন। আপনার জ্ঞান দক্ষতা বাড়বে ও ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
এমনকি যারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না কিংবা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের জন্য সকালের ব্যায়াম খুবই জরুরি। গবেষণার তথ্য মতে, ঘুম থেকে সকালে উঠে শরীরচর্চার করলে উজ্জ্বল আলোর এক্সপোজার আপনার শরীরের ঘড়ি পুনরায় সেট করে। ফলে রাতে দ্রুত বিছানার জন্য প্রস্তুত করে।
Advertisement
এছাড়া সকালের সূর্যালোক শুধু শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণ করে তা নয়, বরং এটি ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদনকেও দমন করে। ফলে দিনটি আরও ভালো কাটে হয়।
অন্য এক গবেষণা বলছে, প্রতিদিন সকালে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৫-৪০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ভালো রক্ত সঞ্চালন, নিম্ন রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
তবে মনে রাখবেন, যদি আপনি খালি পেটে ব্যায়াম করেন হালকা বা মাঝারি কার্ডিওতে লেগে থাকুন, যেমন দ্রুত হাঁটা। আপনি যদি খুব বেশি ব্যায়াম করেন, তাহলে শক্তির মাত্রা কমে গেলে মাথা ঘুরতে পারে।
ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই পানি পান করুন। না হলে আপনি সকালেই পানিশূন্য হয়ে পড়বেন। ওয়ার্কআউটের আগে ও পরে কয়েক গ্লাস পানি আপনার শরীরকে রিহাইড্রেট করে ও টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করতে পারে।
আর অবশ্যই ব্যায়াম করার পরপরই কিছু খাবেন না। কারণ খালিপেটে সকালে ব্যায়াম করার পরও শরীর ৩০ মিনিট পর্যন্ত ক্যালোরি বার্ন করে। তাই অন্তত আধা ঘণ্টা পর সকালের নাস্তা খান।
সূত্র: ব্রাইট সাইড
জেএমএস/জেআইএম