ফিচার

‘জীবনের অনেক কিছু সিসিমপুর থেকে শিখেছি’

মামুনূর রহমান হৃদয়

Advertisement

প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের শেখাকে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৪ সালে ‘সিসিমপুর’ যাত্রা শুরু করে। দিন দিন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছে অনুষ্ঠানটি। হালুম, টুকটুকি, ইকরি কিংবা শিকু সবার কাছে পরিচিতি নাম। শিশুরা তো আছেই সেই সঙ্গে বড়রাও ইকরির দুষ্ট-মিষ্টি কাজ, বিজ্ঞানী শিকুর বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট, টুক্টুকির নতুন কিছু শেখা কিংবা হালুমের মাছ খাওয়া সব কিছুর সঙ্গে মিশে গেছে সবাই।

২০০৭ সালে এসিপিআর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু সিসিমপুর অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখে, তারা তাদের চেয়ে এক বছরের বড় শিশু, যারা সিসিমপুর দেখে না, তাদের চেয়ে ভাষা, বর্ণ, গণিত ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ে বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকে। এছাড়া, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট পরিচালিত একটি জরিপে সিসিমপুর শিশুতোষ অনুষ্ঠান হিসেবে শীর্ষস্থানীয় এবং সামগ্রিকভাবে তৃতীয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়।

তবে যারা এই চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেন তারাও আপন করে নিয়েছেন চরিত্রগুলোকে। সিসিমপুরের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সায়মা করিম। ফলে পাপেটের সঙ্গে তার পুরোনো প্রেম। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সিসিমপুরের টুকটুকি সায়মা করিম। পাপেটের সঙ্গে সায়মা করিমের বন্ধুত্বের গল্প লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।

Advertisement

সিসিমপুরের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?সায়মা করিম: উচ্চমাধ্যমিকের পর বাবা চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হলেন। তখন মনে হলো নিজে কিছু চেষ্টা করি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে বড় বোন বলল, তুই তো পুতুল খেলতে ভালোবাসিস দেখ ‘পাপেটিয়ার চাই’ দিবি নাকি সিভি! দিলাম সিভি।

মোস্তফা মনোয়ার স্যারের পারুল আমার খুব পছন্দ ছিল! মনে হলো দেখি না কী হয়! প্রথমে আমাদের টিচার মার্টিন আমাদের সব বুঝিয়ে দিলেন! পাপেটিয়ার সিলেকশনটা ধাপে ধাপে কিছু কাজে শুরু হয়। যেদিন প্রথম পাপেট হাতে নিলাম একদম ভয় লাগেনি! খুব আগ্রহ নিয়ে পাপেট কীভাবে কী করে শেখা শুরু করলাম। এরপর পাপেট হয়ে গেল নেশা।

কীভাবে সিসিমপুরের সঙ্গে পথচলা?সায়মা করিম: ২০০৪ সাল থেকে সিসিমপুরের সঙ্গে টুকটুকি চরিত্রে কাজ শুরু করি। তখন আমি স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ি। আমি সবসময়ই বলে থাকি সিসিমপুরে না বুঝে হুট করে চলে এসেছি। জীবনের অনেক কিছু সিসিমপুর থেকে শিখেছি। সিসিমপুর নিজেই একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সিসিমপুরের টুকটুকি চরিত্রটি কতটা আপন?সায়মা করিম: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিসিমপুরের প্রতিটা চরিত্র প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে। অনেকদিন পর দেখা হলে হালুম আদর করে ডেকে জড়িয়ে ধরে। শিকু অভিমান করে। ইকরি নানা প্রশ্ন করে। ২০১৮ সালে সিসেমি ওয়ার্কশপ নিউইয়র্কে তিন দিনের পাপেটিয়ার ওয়ার্কশপ করলাম! স্বপ্ন পূরণ হলো! সিসিমপুরের সঙ্গে ভালোবাসা এতটাই বেড়ে গেল যে যখন সিসিমপুরের কাজ হতো না তখন অস্থির লাগত!

Advertisement

নতুন প্রজন্মের কাছে পাপেট ছড়িয়ে দিতে কিছু করার পরিকল্পনা আছে?সায়মা করিম: সিসিমপুরে ফিফথ সিজন থেকেই পাপেট ট্রেইনার হিসেবে কাজ করি। মনে হলো পাপেট যখন আছে তাহলে ভালোবাসাটা কেন ছড়িয়ে দেব না। পাপেট শেখানোর শুরু নিজের মেয়েকে দিয়ে। ২০১৯ সালে কিছু ছেলেমেয়ে নিয়ে কাজ শুরু করলাম! তাদের পাপেটের প্রতি আগ্রহ দেখে নিজের ইচ্ছাও বেড়ে গেল! নিজেদের পাপেটিয়ার নিয়ে দুরন্ত টিভিতে, বর্ণমেলার ঘর, মেছো তোতা গেছো ভূত, গোলক ধাঁধা, কাট্টুস কুট্টুস, হাবলু গাবলু করলাম! ভালোবাসা আসলে সংক্রামক! তারপর নানা সচেতনতামূলক লাইভ শো, সচেতনতামূলক ডকুড্রামা বানালাম! পাপেট নিয়ে চলাটা সেই যে শুরু হলো কবে শেষ হবে ঠিক নেই!

নতুন যারা পাপেটিয়ার হতে চান তাদের উদ্দেশ্য কী বলবেন?সায়মা করিম: ভালোবাসা বন্ধুত্ব না থাকলে পাপেটকে প্রাণ দেওয়া খুব কঠিন! বন্ধুত্ব হতে হবে একদম গভীর। এই মন্ত্র আমি আমার গুরু মার্টির কাছে শিখেছি।লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/জিকেএস