সাইফুর রহমান তুহিন
Advertisement
আমাজন নদী সম্পর্কিত এমন অনেক বিষয় আছে, যা এখনো হয়তো অনেকেরই অজানা। আমাজন নদী হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলাধারগুলোর একটি।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলাধার হয়তো নয় তবে এর অনেক বিস্ময়কর দিক আছে। জেনে নিন আমাজন নদীর তেমনই ৭ অজানা বিষয়-
বিশ্বের সর্ববৃহৎ উষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমি
Advertisement
আমাজন নদীর ছোট ছোট নালা প্রবাহিত হয়েছে আমাজন বনভূমির মধ্য দিয়ে। আর এ কারণেই জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বিশাল এ বনভূমি বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ।
রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, এই আমাজন বনভূমি কমপক্ষে এক মিলিয়ন কীটপতঙ্গ, প্রায় ২০০০ জীবজন্তু ও পাখি, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদসহ মোট ৩৯০ বিলিয়ন বিভিন্ন বৃক্ষের আবাসস্থল।
কোনো সেতু নেই
এ বিষয়টি উপলব্ধি করা একটু কঠিন যে, এতোবড় একটি নদীর ওপর কোনো সেতু নেই, এটি শুধুই একটি নদী। এটির চারপাশে শুধু ঘন সবুজ বনভূমির অবস্থানই নয়, আরও রয়েছে আকাশ থেকে প্রাণভরে উপভোগ করার মতো নজরকাড়া সব দৃশ্য।
Advertisement
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নদীর দু’পাশে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষের উপস্থিতি আছে। যারা শুধু নৌকার সাহায্যে এক পার থেকে আরেক পারে যাতায়াত করে।
যথাযথ অবকাঠামোর অভাব বরং এই অঞ্চলের বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এ কারণে এখানকার ঋতু পরিবর্তনও একেবারে সময়মতো হয়ে থাকে।
নদীর উৎপত্তি
আমাজন নদীর উৎপত্তি ও আকার নিয়ে অনেক আগ থেকেই মতানৈক্য আছে। বিষয়টি বেশ জটিল এসব বিষয়ে তথ্যের বিভিন্ন উৎস আছে।
কেউ বলেন, পেরুর আন্দিজ পর্বতমালাস্থ মিসমি পিক থেকে এটির উৎপত্তি হয়েছে আবার কেউ বা বলেন মারানন কিংবা উকায়ালি নদী থেকে।
উৎসের ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রের বিভিন্ন দাবি থেকে ধারণা করা হয়, নদীটির উৎপত্তি আসলে পেরু থেকেই হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি পানির নদী
বিশ্বের দীর্ঘতম নদী কোনটি এ বিষয়ে আমাজন ও আফ্রিকার নীলনদকে নিয়ে অনেক বিতর্কই আছে। তবে আকৃতি ও পানিধারণ ক্ষমতার বিষয়ে আমাজনের কোনো প্রতিদ্বন্দী নেই।
এটি সন্দেহাতীতভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম নদী যা বছরে প্রতি সেকেন্ড ২ লাখ ৯ হাজার কিউবিক মিটার পানি অবমুক্ত করে ও মিলিত হয় আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে। এর ফলে সাগরটির ২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে লবণাক্ততা অনেকটাই কমে যায়।
বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী
৬ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নীলনদ সব সময়ই বিশ্বের দীর্ঘতম নদীর তকমা পেয়ে আসছে। তবে আমাজন প্রায়ই এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানায়। আমাজনের অনেক শাখা-প্রশাখা আছে যেগুলো দিয়ে অনেক সুপরিচিত নৌ-পর্যটকরা ভ্রমণ করেন।
এদের অনেকেই আমাজানের আকার ও দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে খুঁজে পেয়েছেন, আমাজন নীল নদের চেয়ে প্রশস্ততর ও গভীরতর। যদিও এ বিষয়ে অনেক মতভেদ আছে।
বয়ে গেছে অনেকগুলো দেশের ওপর দিয়ে
আমাজন নদী প্রবাহিত হয়েছে কলম্বিয়া, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা ও পেরুর ওপর দিয়ে তবে ব্রাজিলের ওপর দিয়ে একটু বেশি। তবে আমাজন তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টের তাজা পানির স্পর্শ পেয়েছে আরও বেশি দেশ।
এর পাশাপাশি কলম্বিয়া, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর ও ভেনিজুয়েলার বৃষ্টিপাত আমাজনের বেশিরভাগ তাজা পানির উৎস।
একসময় বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতো নদীটি
বর্তমানে দাপুটে আমাজন নদী আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। তবে অতীতে সব সময় যে এমনটি ঘটতো তা কিন্তু নয়। বহু বছর আগে নদীটি প্রবাহিত হতো পশ্চিম দিকে।
পরবর্তীতে ভূ-পৃষ্ঠ কাত হওয়ার ঘটনায় নদীটির গতিপথ পাল্টে যায় ও এটি পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। রেকর্ডপত্র থেকে জানা যায়, এই পরিবর্তনের মূলে ছিলো নদীভাঙন। যার সাথে ছিলো বড়সড় কিছু ভৌগলিক পরিবর্তন।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।
জেএমএস/জিকেএস