বিমা দাবির টাকা না পেয়ে গত বছর দুটি সাধারণ বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী। বিমা দাবির টাকা না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে না পারা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-শ্রমিক মিলে প্রায় ১৫০ জন লোক বেকার হয়ে পড়ার অভিযোগ করেন তিনি।
Advertisement
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানকে লেখা অভিযোগপত্রে নাছিমুল আলম চৌধুরী উল্লেখ করেন, দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিমা কোম্পানি দুটি বিমা দাবির টাকা পরিশোধ না করে টালবাহানা করছে। অনেকবার তাগাদা দেওয়ার পর দুই কিস্তিতে ২ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও ক্ষতিপূরণের বাকি ৭ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার ১৭৯ টাকা পরিশোধ করেনি বিমা কোম্পানি দুটি।
দেশে ব্যবসা করা বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ হরহামেশাই ওঠে। ফলে বিমার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না সাধরণ মানুষ। এতে করে বড় হচ্ছে না বিমার বাজার। আবার যারা বিমার আওতায় আসছেন, হয়রানির মধ্যে পড়ায় তারাও বিমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বিমা কোম্পানিগুলোতে বড় ধরনের দাবি বকেয়া পড়ে থাকার তথ্য উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র প্রতিবেদনেও।
Advertisement
সম্প্রতি আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে ব্যবসা করা সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ দাবি পরিশোধ করেছে, তার থেকে বেশি পলিসির বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো ৮ হাজার ১৩৪টি বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করেছে। বিপরীতে ১২ হাজার ৭০৯টি বিমা দাবির টাকা বকেয়া রয়েছে। এ সময়ে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধ করা বিমা দাবির পরিমাণ ৪১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৫ টাকা। বিপরীতে বকেয়া থাকা বিমা দাবির পরিমাণ ১ হাজার ৪১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৯২৮ টাকা। অর্থাৎ উত্থাপিত হওয়া দাবির ৭৮ শতাংশের অর্থ পরিশোধ করেনি বা বকেয়া রয়েছে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে।
বেশিরভাগ বিমা দাবির টাকা বকেয়া থাকার কারণ হিসেবে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিমা দাবির জন্য গ্রাহকরা সঠিকভাবে কাগজপত্র দিচ্ছেন না। আবার কিছু গ্রাহক অসৎ পথও অবলম্বন করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বিমা দাবি চাচ্ছেন। এসব কারণেই সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে বড় ধরনের বিমা দাবি বকেয়া পড়ে রয়েছে।
দুর্ঘটনায় পড়লে সুযোগ রয়েছে বিমা থেকে ক্ষতিপূরণের
Advertisement
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আইডিআরএ’র প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাবি পরিশোধের হার সবচেয়ে ভালো ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের। তবে এ কোম্পানিটিতেও প্রায় অর্ধেক বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে। তবে টাকার অঙ্কে পরিশোধ করা বিমা দাবির তুলনায় বকেয়া বিমা দাবির পরিমাণ বেশি।
কোম্পানিটিতে উত্থাপিত হওয়া ৯১টি দাবির বিপরীতে ৫২টির দাবি পরিশোধ করা হয়েছে এবং ৩৯টি বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে। এক্ষেত্রে দাবি পরিশোধের হার ৫৭ শতাংশ। আর টাকার অঙ্কে বিমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৮ টাকা। বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৭১ শতাংশ বিমা দাবির টাকা বকেয়া রয়েছে।
এর পরের স্থানে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। এ কোম্পানিটিতে উত্থাপন হওয়া ৯ হাজার ৩৪৪টি বিমা দাবির মধ্যে ৫ হাজার ২৭৩টি পরিশোধ করা হয়েছে। বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৪ হাজার ৭১টি। এক্ষেত্রে দাবি পরিশোধের হার ৫৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটি ৭৮ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৪৫ টাকার দাবি পরিশোধ করেছে। বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৪২৩ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৬ টাকা। অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাধারণ বিমা করপোরেশনে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে ১৯৬টি দাবির বিপরীতে ২৯৭ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭০ টাকা বকেয়া রয়েছে। অন্যদিকে ৩৩টি দাবির বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ১০৭ কোটি ৬৭ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ টাকা দাবি পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে উত্থাপন করা ৮৬ শতাংশ বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে।
বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল দুর্ঘটনায় পড়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
বেসরকারি সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে দাবি বকেয়া রয়েছে ৭৮৮টি। বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে ৪৮৯টি। এ হিসেবে দাবি বকেয়া রয়েছে ৬২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটিতে বিমা দাবি বকেয়া রয়েছে ১৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ২০ টাকা। দাবি পরিশোধ করা হয়েছে ৫৬ কোটি ৯৫ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৩ টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে দাবি বকেয়া রয়েছে ৭৮ শতাংশ।
কার কত দাবি বকেয়া
অগ্রণীর ১১১টি দাবির বিপরীতে ৪ কোটি ৩২ লাখ ৬৬ হাজার ২৪২ টাকা, এশিয়ার ৫৮টি দাবির বিপরীতে ৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৩ হাজার ৫২১ টাকা, এশিয়া প্যাসেফিক জেনারেলের ১৩১টি দাবির বিপরীতে ৮ কোটি ৯৫ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকা, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভের ১১টি দাবির বিপরীতে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৮ টাকা, বাংলাদেশ জেনারেলের ৫৪১টি দাবির বিপরীতে ১২ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার ৬৯৪ টাকা, বাংলাদেশ ন্যাশনালের ২০০টি দাবির বিপরীতে ১৫ কোটি ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ৪০৫ টাকা, সেন্ট্রালের ৬৮টি দাবির বিপরীতে ২ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৬ টাকা, সিটি জেনারেলের ১০৪টি দাবির বিপরীতে ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮২ টাকা, কন্টিনেন্টালের ১২২টি দাবির বিপরীতে ৫০ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৫ টাকা বকেয়া রয়েছে।
এছাড়া ক্রিস্টালের ১০৮টি দাবির বিপরীতে ১০ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৮ টাকা, দেশ জেনারেলের ৭টি দাবির বিপরীতে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ টাকা, ঢাকার ৬৯টি দাবির বিপরীতে ২ কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৯ টাকা, ইস্টার্নের ২৭৪টি দাবির বিপরীতে ২৪ কোটি ৭০ লাখ ৪৮ হাজার ১৪১ টাকা, ইস্টল্যান্ডের ২০৪টি দাবির বিপরীতে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৭২ হাজার ২২০ টাকা, এক্সপ্রেসের ১২৬টি দাবির বিপরীতে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ২৬১ টাকা, ফেডারেলের ১৭৫টি দাবির বিপরীতে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৪৩ টাকা বকেয়া রয়েছে।
একইভাবে গ্লোবালের ১৬৫টি দাবির বিপরীতে ৬ কোটি ৩০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৫ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়ালের ১৫১টি দাবির বিপরীতে ৪ কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার ৭৩৮ টাকা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের ৯৮টি দাবির বিপরীতে ২৬ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৩ টাকা, জনতার ৮১টি দাবির বিপরীতে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৭৪ টাকা, কর্ণফুলীর ৭৮টি দাবির বিপরীতে ৬ কোটি ৮১ লাখ ৪ হাজার ৮৬৪ টাকা, মেঘনার ৪৫৫টি দাবির বিপরীতে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯১ টাকা, মার্কেন্টাইলের ৩১১টি দাবির বিপরীতে ৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, নিটলের ৫৮৬টি দাবির বিপরীতে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার ২৭ টাকা, নর্দার্ন ইসলামীর ১৬৪টি দাবির বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা।
প্যারামাউন্টের ১১২টি দাবির বিপরীতে ১ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ২১৫ টাকা, পিপলসের ২৬২টি দাবির বিপরীতে ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ টাকা, ফিনিক্সের ২৮৪টি দাবির বিপরীতে ৩৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯৪ টাকা, পাইওনিয়ারের ৫৩০টি দাবির বিপরীতে ৪০ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ১৪২ টাকা, প্রাইমের ১২৩টি দাবির বিপরীতে ৪৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৩ টাকা, প্রভাতীর ১৩৯টি দাবির বিপরীতে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭২ টাকা, পূরবী জেনারেলের ১১৬টি দাবির বিপরীতে ৫ কোটি ৯৪ হাজার ৫৮৫ টাকা, রিপাবলিকের ১৫৫টি দাবির বিপরীতে ৭ কোটি ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ২৩০ টাকা, রূপালীর ৩১৬টি দাবির বিপরীতে ৫ কোটি ১৩ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা, সেনা কল্যাণের ৮০টি দাবির বিপরীতে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা, সিকদারের ২৫টি দাবির বিপরীতে ৯ কোটি ৮২ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৭ টাকা, সাউথ এশিয়ার ১৭৩টি দাবির বিপরীতে ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৯ টাকা, স্ট্যান্ডার্ডের ১০৫টি দাবির বিপরীতে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার ৬৫০ টাকা, তাকাফুল ইসলামীর ৭৭টি দাবির বিপরীতে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১৬ টাকা এবং ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৫১৮টি দাবির বিপরীতে ৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৮ টাকার দাবি বকেয়া রয়েছে।
বিমা দাবির টাকা পেতে দুর্ঘটনা ঘটানোরও অভিযোগ রয়েছে
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহমেদ সাইফুদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, দাবি পরিশোধের যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়ায় গ্রাহক অনেক সময় কাগজপত্র ঠিকভাবে জমা দেয় না। সে কারণে সার্ভে রিপোর্ট চূড়ান্ত হয় না এবং দাবিও পরিশোধ করা হয় না। এ কারণে বকেয়া দাবি বেশি দেখা যাচ্ছে।
পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে চলতি দায়িত্ব পালন করা এস এম মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পুঞ্জীভূত হিসাব হওয়ার কারণে বকেয়া বিমা দাবি অনেক দেখাচ্ছে। বেশিরভাগ সময় গ্রাহক সঠিকভাবে কাগজপত্র জমা দেন না, ফলে গ্রাহকের দাবির টাকা পরিশোধ করা হয় না। ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে আমরা সার্ভে রিপোর্ট পাওয়ার এক মাসের মধ্যে গ্রাহকের দাবির টাকা পরিশোধ করি।
আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতার জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে দাবি বকেয়া থাকার কারণ গ্রাহকও এখানে শয়তানি করে। নিজেই আগুন লাগিয়ে দেয়। এটা সেটেল করতে সময় লেগে যায়। আবার দেখা যায় খারাপ জাহাজ ভাড়া করে মাল না উঠিয়ে বালু, টালু উঠিয়ে জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আসায় এ ধরনের অসৎ পথ অবলম্বন করে। সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে দাবি বকেয়া থাকার কারণ এগুলো।
তবে গ্রাহকরা বলছেন, যথাযথভাবে কাগজ জমা দেওয়ার পরও তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
বিমা দাবির টাকা না পেয়ে আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করেছেন মেসার্স সুজন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. সুজন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বিমা কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। এরপরও বিমা দাবির টাকা দেওয়া হচ্ছে না। নানাভাবে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এক বছরের বেশি হয়ে গেছে আমি বিমা দাবির টাকা পায়নি। গত মার্চে আইডিআরএ’র কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু এখনো বিমা কোম্পানি দাবির টাকা দেয়নি।
এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম