নতুন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে ৬ ম্যাচ খেলা হয়েছে বাংলাদেশের। কোনো জয় নেই দুটি ড্র মাত্র। ৬ ম্যাচে গোল খেয়েছে ১০টি, দিয়েছে দুটি। এর মধ্যে তিনটি ছিল ফিফা ফ্রেন্ডলি এবং শেষ তিনটি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ।
Advertisement
এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে ভালো খেলেছে। শেষ ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলেছে যাচ্ছেতাই।
নতুন এই স্প্যানিশ কোচের অধীনে বাংলাদেশ কেমন খেলছে এবং বাংলাদেশ কেন জিততে পারছে না তা নিয়ে জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলামকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাবেক তারকা স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলাম।
জাগো নিউজ: এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে তিনটি ম্যাচ খেললো বাংলাদেশ। দেখেছেন নিশ্চয়ই?
Advertisement
আসলাম: হ্যাঁ, টিভিতে তিনটি ম্যাচই আমি দেখেছি। তিনটি ম্যাচ তিন রকম হয়েছে। প্রথম ম্যাচে বাহরাইন ভালো খেলে জিতেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ভালো খেলে হেরেছে এবং শেষ ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ কোনো ফুটবলই খেলতে পারেনি।
জাগো নিউজ: তিন ম্যাচ পর আমাদের স্ট্রাইকিং সমস্যাটা আবার আলোচনায় এসেছে। আপনি কি মনে করেন?
আসলাম: স্ট্রাইকিং জোনে সমস্যা এটা ঠিক। তাই বলে ওই একটা কারণেই যে আমরা খারাপ করছি তা নয়। দলের বোঝাপড়ার অভাব ছিল। এক কথায় ঘাটতি ছিল টিমওয়ার্কে।
জাগো নিউজ: এ বিষয়টা নিয়ে যদি বিস্তারিত বলতেন।
Advertisement
আসলাম: তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটির কথা বলি। দ্বিতীয় যে গোলটি আমরা খেলাম সেটা কীভাবে হলো? আমরা কিন্তু ওদের আক্রমণে অ্যালাউ করেছি। তাই দুজন এসে গোল দিয়ে গেছেন- একজন লেফট উইঙ্গার, অন্যজন স্ট্রাইকার। বাংলাদেশের সবাই সামনে চলে গেলো, পেছনের খবর থাকলো না। ডিফেন্স কমপ্যাক্ট থাকলে ওই গোলটি হয় না।
জাগো নিউজ: আপনার কি মনে হয়, দ্বিতীয় ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিততে পারতো?
আসলাম: বাংলাদেশ যেমন খেলেছে তাতে জেতা উচিত ছিল। না জিতলেও হারাটা ঠিক হয়নি। ড্র হলেও মানানসই হতো।
জাগো নিউজ: না জেতার কী কারণ দেখছেন আপনি?
আসলাম: ওই যে স্ট্রাইকিং সমস্যা। যে সুযোগগুলো এসেছিল একজন দক্ষ স্টাইকার থাকলে গোল বের করতে পারতেন। সামনে যখন শুধুই গোলরক্ষক, তখন গোল করতে না পারলে তো ম্যাচ জেতা যাবে না। তিন ম্যাচেই পরিষ্কার হয়েছে স্ট্রাইকিং জোনে দক্ষ খেলোয়াড়ের অভাব।
জাগো নিউজ: স্ট্রাইকার তৈরি হচ্ছে না কেন? আপনাদের সময়কালের মতো একজন স্টাইকারও এখন পাওয়া যায় না।
আসলাম: দেখুন আমাদের ক্লাবগুলো কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দল গঠন করে। তাদের একটা লক্ষ্য থাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তাই তারা বিদেশি স্ট্রাইকার এনে খেলায়। আমাদের স্থানীয় স্ট্রাইকাররা সুযোগ পান না।
জাগো নিউজ: আপনাদের সময়ও তো বিদেশিরা খেলতেন। এর মধ্য দিয়েও তো আপনারা জায়গা করে নিয়েছেন, গোল করে ম্যাচ জিতিয়েছেন। এখন পারছে না কেন?
আসলাম: আপনাকে ফাইট করতে হবে ওই জায়গায় খেলার জন্য। আমরা ফাইট করে খেলেছি, গোল করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছি। এখন তো বিদেশিদের সঙ্গে ফাইট করারই কেউ নেই।
জাগো নিউজ: এর সমাধান কী?
আসলাম: স্ট্রাইকার সংকট সমাধানের অনেক পথ আছে। প্রথমত আপনাকে জেলা লিগ করতে হবে। আমরা কিন্তু জেলার ফুটবল থেকে উঠে এসেছিলাম। এখন তো জেলায় লিগ হয় না। সারা দেশেরই ফুটবল স্থবির।
জাগো নিউজ: ক্লাবগুলো যদি স্থানীয় স্টাইকারদের সুযোগ কম দেয় তাহলে কি করার আছে?
আসলাম: বাফুফেকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বাইলজে আইন করতে হবে যে, কমপক্ষে একজন স্ট্রাইকার মাঠে রাখতে হবে।
জাগো নিউজ: এভাবে কোটা করে কি ফুটবল হয়?
আসলাম: হবে না কেন? আমাদের সময় একটা নিয়ম ছিল দুইজন নতুন খেলোয়াড় মাঠে রাখা বাধ্যতামূলক। ওই দুইজনের পরিবর্তে নতুন দু’জনকেই নামাতে হতো। এভাবে স্থানীয় স্ট্রাইকার খেলানোর নিয়মটা করা যায়।
জাগো নিউজ : কোচতো সব শিখিয়েই খেলোয়াড়দের মাঠে নামান। মাঠে খেলোয়াড়রা সব ভুলে গেলে তখন কি করার?
আসলাম : দেখুন মাঠে অধিনায়কের একটা বড় ভূমিকা আছে। আমাদের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মঝেমধ্যে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারও প্রয়োজনে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া উচিত, দিতে হবে। মাঠে অধিনায়কের ভূমিকা থাকা উচিত।
জাগো নিউজ : ফলাফল বাদ দিলাম, নতুন কোচের অধীনে খেলার কোন পরিবর্তন এসেছে কি?
আসলাম : হ্যাঁ। এটা স্বীকার করতে হবে। খেলার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এই যেমন পাসিং ক্যাপাবিলিটি বেড়েছে। মাঠে ওরা চেষ্টা করেছে। খেলোয়াড়দের আন্তরিকতার কোন অভাব ছিল না; কিন্তু পারেনি।
জাগো নিউজ : এই তিন ম্যাচ দেখার পর বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
আসলাম : আমি যদি এক কথায় বলি তাহলে বলবো- এটাই এখন আমাদের ফুটবলের স্ট্যান্ডার্ড। আপনি যখন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে অবস্থান তৈরি করতে পারবে না তখন এশিয়া লেভেলের কথা চিন্তা করে লাভ নেই। এই তিন ম্যাচে ছেলের লড়াই করেছে, বীরের মতো খেলেছে। কিছু কৌশলের কাছে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে।
জাগো নিউজ : এই সমস্যা সমাধানে আপনার কি উপদেশ থাকবে?
আসলাম : ফুটবল নিয়ে নড়েচড়ে বসার সময় হয়েছে। আমাদের ফুটবলের বর্তমান স্ট্যান্ডার্ডটাই যখন এরকমই তখন এই দল নিয়ে বেশি টানাটানি করলে ছিঁড়ে যাবে। এই দলটি দিয়ে সাফে কিভাবে ভালো করা যাবে সে চেষ্টা করতে হবে।
জাগো নিউজ : ধন্যবাদ।আসলাম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/