বর্তমানে মাঠে বড় ধরনের কোনো ফসল না থাকায় বন্যায় যতটুকু ক্ষতি হবে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বন্যা মোকাবিলায় এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না।
Advertisement
রোববার (১৯ জুন) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি কনভেনশন হলে কৃষিতথ্য সার্ভিসের আয়োজনে ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিসচিব সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুল রাজ্জাক। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি হবে না। এখনো সারাদেশে খুব বেশি বীজতলা করা হয়নি। যা হয়েছে সেটাও নষ্ট হলে খুব সমস্যা হবে না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষিত আছে, পরে সেগুলো চাষিদের দেওয়া হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, আউশের ক্ষতি একটু বেশি হতে পারে। এবার ১১ লাখ হেক্টর আউসের টার্গেট করেছিলাম, এরই মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন শাকসবজি আছে, সেগুলোর কিছু ক্ষতি হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এই মৌসুমের ফসলগুলো প্রায় সময়ই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কৃষকরাও সেভাবে প্রস্তুতি রাখেন। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সে ক্ষতি পূরণ করবো। তারপরও যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা ধেঁয়ে আসছে, আকর্ষিক বড় ক্ষতি হবে কি না সেটা জানি না।
তিনি বলেন, এজন্য আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছি। যদি বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়, সেটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। নানাবিধ সমস্যার কারণে এ দেশে বহুবার খাদ্য সংকটের নজির রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় কখনো খাদ্যের অভাব হয়নি। এমনকি খাদ্যের জন্য হাহাকারও করতে দেখা যায়নি কখনো।
মন্ত্রী আরও বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেশেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারপরও আমরা পরিকল্পিত কর্মসূচি নেওয়ার চেষ্টা করছি। কৃষি উৎপাদনে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য এবছর সারে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছি। যেটা অন্যান্য দেশও পারেনি। সেজন্য বিশ্ববাজারে সারের অস্বাভাবিক দাম বাড়লেও দেশে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
Advertisement
এসময় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে যেভাবে কৃষি জমি কমছে, তাতে আগামীতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও বাংলাদেশ উৎপাদনের দিক থেকে সারাবিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, যেভাবে কৃষিজমি কমছে তাতে আগামী ২০ বছর পর যেখানে বাংলাদেশে আরও ৪ কোটি মানুষ যোগ হবে, তখন লাখ একর জমি কমে যাবে। আর আগামী শতাব্দিতে কোনো কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। তখন মানুষকে কীভাবে খাওয়ানো হবে সে বিষয় মাথায় রেখে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি, সেটা পরিবেশ ও প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে করতে হবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। সেজন্য গণমাধ্যমকে ব্যাপক ভূমিকা নিতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সদস্য (এপিএ পুল) ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল, স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষিতথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরঞ্জিত সাহা রায়।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার কাওসার রহমান, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ।
এনএইচ/ইএ/জিকেএস