সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। রোববার (১৯ জুন) ভোরে পানি নেমে যাওয়ায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহও স্বাভাবিক হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পর সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ সরকারি হাসপাতালটিতে সৃষ্টি হওয়া ভুতুড়ে পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। চরম দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছেন রোগী, স্বজন ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
রোববার দুপুরে জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ভোরে পানি নেমেছে। এরপর হাসপাতালের সার্বিক বিদ্যুৎ সরবরাহও স্বাভাবিক হয়েছে। বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর সবধরনের চিকিৎসাসেবাও চলছে পুরোদমে। এর ফলে দুর্ভোগেরও অবসান হলো। তবে আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট জেনারেটর দিয়ে আইসিইউসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে আলোর ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, পানি নেমে গেলেও আবার বন্যা হতে পারে এমন আশঙ্কায় আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। এছাড়া নিচতলার কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। আমরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এখন আবার ঠিক মতো স্থাপন করছি।
Advertisement
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাতে আমি নিজে অবস্থান করে আমাদের হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে ম্যানুয়ালি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। আইসিইউ বিভাগে ৫ জন রোগী ভেন্টিলেশনে ছিলেন। তাদের সবাইকে আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা সারারাত জেগে থেকে ম্যানুয়েলি চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। একজন রোগীরও কোনো ক্ষতি হয়নি।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব জাগো নিউজকে জানান, পানির সঙ্গে বালুমাটি আর ড্রেনের ময়লা আবর্জনা হাসপাতালে ঢুকে পড়েছিলো। এখন এই ময়লা-আবর্জনাগুলো ব্লিসিং পাউডার দিয়ে ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন ক্লিনাররা ।
শনিবার দুপুরে পানিতে তলিয়ে যায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বিদ্যুতের নিজস্ব ফিডার ও সেন্ট্রাল জেনারেটর পানির নিচে চলে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। অন্ধকার, টানা বৃষ্টি ও বজ্রপাতে সৃষ্টি হয় এক ভুতুড়ে পরিস্থিতির।
বিদ্যুৎ না থাকায় ও হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটুপানি জমে চরম বিপাকে ছিলেন শ্বাসকষ্ট সমস্যা নিয়ে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা।
Advertisement
শ্বাসকষ্ট নিয়ে এ হাসপাতালের ভর্তি হয়েছিলেন সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা আনা মিয়া। হাসপাতালের নিচ তলার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন তিনি। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে টানা ভারী বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা ও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় হাসপাতালের নিচতলা। আনা মিয়াসহ নিচতলার সব রোগীদের নেওয়া হয় উপরের বিভিন্ন তলায়।
বিদ্যুৎ না থাকায় তখন গুরুতর অসুস্থ আইসিইউ, সিসিইউ এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাচ্ছিলো না। তবে এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় সবধরনের চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে।
আনা মিয়া বলেন, আমার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ছিলো। পানি থাকায় বিগত ১৭-১৮ ঘণ্টা অক্সিজেন ছাড়া চরম অসুবিধায় ছিলাম। এখন অক্সিজেন সাপ্লাই ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় আবার অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেকটা সুস্থবোধ করছি।
শনিবার (১৮ জুন) দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে নিচতলার ওয়ার্ডগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করে। হাসপাতালের জেনারেটরে পানি ঢোকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটে। নিচতলায় প্রশাসনিক ব্লক, সার্জারি, নবজাতক শিশুদের বিশেষায়িত ওয়ার্ড স্কেনো, প্যাথলজি বিভাগ, জরুরি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, প্রিজন ওয়ার্ড, এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন কক্ষেও পানি ঢুকে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রায় ১৫০ ব্যাগ রক্ত নষ্ট হয়।
ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম