জাতীয়

‘বন্যাদুর্গত এলাকায় নৌকাভাড়া-মোমবাতির মূল্যবৃদ্ধি অমানবিকতা’

সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রামসহ বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ আরও কার্যকর ও দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। পাশাপাশি এসব কার্যক্রমের মূলে মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

শনিবার (১৮ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান।

নাছিমা বেগম বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকার ভাড়া বৃদ্ধি ও মোমবাতির মূল্য বৃদ্ধির খবর গণমাধ্যমে এসেছে। সর্বকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় সবাই মানবিক আচরণ করবে, এটাই কাম্য। এ ধরনের অমানবিকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটি অন্যায়। এক্ষেত্রে সার্বিক নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সিলেট জেলা প্রশাসনকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

বন্যাকবলিত স্থানসমূহে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় ও পানিবন্দি মানুষকে দ্রুত উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Advertisement

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মনে করে এসব কার্যক্রমে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ও আশ্রয়কেন্দ্রে এসব মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা বিশেষত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও নারীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

গত ১৫ মে এ বর্ষায় প্রথম দফায় বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে।

বুধবার (১৫ জুন) থেকে সিলেটের নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের মধ্যেই সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে।

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিলেটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বাসা-বাড়ি ভাসিয়ে নিয়েছে। একদিনে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটের মানুষজন। বন্যার পানির এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

Advertisement

ভয়াবহ বন্যার শিকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন সিলেটের বানভাসি মানুষ। এছাড়া জেলার কৃষকরা তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা মানবিক সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জেও গত দুই দিন ধরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলাই। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৪ লাখেরও বেশি মানুষ।

এরই মধ্যে পুরো সুনামগঞ্জ শহর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো সুযোগও নেই শহরবাসীর। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় না খেয়েই দিন পার করছেন লাখো মানুষ। অনেকে ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

এসএম/ইএ/জেআইএম