ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি নোংরা ইতিহাস রয়েছে বলা যায়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এই শিল্পও অনেকাংশেই দায়ী বলা যায়। বৈশ্বিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ২৭ শতাংশই আসছে বিভিন্ন অফিস, বাড়ি এবং কারখানা শীতল রাখা বা গরম রাখা এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় যে শক্তি ব্যয় হয় তা থেকে। এর কারণে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Advertisement
নতুন নির্মাণে ব্যাপক হারে ইস্পাত ও সিমেন্টের ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্ষিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয় এক তৃতীয়াংশই আসে বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জমি বা বাড়ির মালিক এবং নির্মাণ শিল্পের বেশ কিছু খারাপ রেকর্ড রয়েছে বলা যায়। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রায় এক শতাব্দী সময় লেগে যেতে পারে। বিশ্ব আরও বেশি নগরায়ণের দিকে ঝুঁকছে এবং পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শহরগুলোতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার ভবন নির্মাণ করতে হবে।
তবে করোনা মহামারির কারণে এই ধারাবাহিকতায় কিছুটা ধীর গতি আসতে পারে। কারণ এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান ঘরে বসেই কাজের অনুমতি দিচ্ছে। ফলে অফিসের চাহিদা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
Advertisement
নির্মাণ শিল্প থেকে জলবায়ু রক্ষায় কী করা যেতে পারে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন? এই সমস্যাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম লক্ষ্য হলো- বিদ্যমান সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে ভবন মালিকদের উৎসাহিত করা। দীর্ঘমেয়াদে, বিদ্যুৎ উত্পাদন নবায়নযোগ্য করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিদিনের বিদ্যুতের ব্যবহার থেকে উদ্ভূত নির্গমন হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বড় শহরগুলোতে বিল্ডিং কোড এবং শহরব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যগুলোর প্রতি ভবন মালিকদের প্ররোচিত করতে হবে এবং জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বোঝাতে হবে।
তবে আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বেশ কঠিন। কারণ অনেক বাড়ির মালিকের কাছে খুব বেশি নগদ অর্থ নাও থাকতে পারে এবং খুব কমই বাড়িই নতুন করে সংস্কার করা যায়। কারণ এ বিষয়গুলো বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে। ইতালিতে আপনি এক লাখ ইউরো পর্যন্ত ট্যাক্স ক্রেডিটের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ির জন্য গ্রিন হোম সংস্কারের সম্পূর্ণ খরচ এমনকি অতিরিক্ত ১০ শতাংশও দাবি করতে পারেন। কিন্তু সব দেশে তো আর এই সুযোগ সহজ নয়।
দেশটিতে ২০২০ সালের জুলাই মাসে চালু হওয়ার পর থেকে নতুন এই পরিকল্পনার অধীনে ২১ বিলিয়ন ইউরো দেওয়া হয়েছে। অনেক ধনী বাড়ির মালিকও এই পরিকল্পনার অধীনে ভালো অর্থ পেয়েছেন। গ্রিন-বিল্ডিং প্রযুক্তি এবং সংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত জ্ঞানের ঘাটতি এবং দক্ষতার ঘাটতি মোকাবিলায় বিনিয়োগ করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে আরও ভালো উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে যেন বাড়ির মালিকরা তাদের শক্তি ও দক্ষতা উন্নত করতে পারে। তেল এবং গ্যাসের দাম বাড়তে থাকায় অনেক কিছু খুব সহজলভ্য নয়। তাই তাদের অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে।
দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো কখন ভবনগুলোকে সংস্কার করতে হবে এবং কখন সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে এবং পুনর্নির্মাণ করতে হবে সে সম্পর্কে আরও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধা দেওয়া। ফলে বর্জ্য ও দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। চলতি বছর ব্রিটেনে বেশিরভাগ নতুন ভবনগুলোকে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংস্কার ও মেরামতের ক্ষেত্রে এমন কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
Advertisement
এক্ষেত্রে চূড়ান্ত লক্ষ্য নিশ্চিত করা উচিত যেন নতুন ভবনগুলোর নির্মাণ অতীতের তুলনায় অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন হয়। সবুজ বিল্ডিং কোড একটি শক্তিশালী হাতিয়ার; দীর্ঘমেয়াদে, উচ্চতর কার্বন কমিয়ে পুরো নির্মাণ এবং বিল্ডিং-সামগ্রী সরবরাহ চেইনকে তার কাজ আরও সহজ করতে বাধ্য করবে।
তবে ভালো খবর হচ্ছে এক্ষেত্রে উন্নতি করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। নতুন শিল্প প্রক্রিয়ায় সিমেন্ট এবং ইস্পাত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারে। প্রিফেব্রিকেটেড হাউসসহ আরও ভালো নির্মাণ পদ্ধতিগুলো বেশি শক্তি এবং কার্বন-দক্ষ কিন্তু খুব কমই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এখনই সময় একটি নতুন পদ্ধতির নির্মাণ শিল্পের যাত্রা শুরু করার।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
টিটিএন/এএসএম