দেশজুড়ে

সিলেটে বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর থেকে তারা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন।

Advertisement

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এই বন্যা আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। হঠাৎ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’- এর আওতায় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ এর ধারা ৩০ মোতাবেক বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে সিলেট বিভাগের (সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা) বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘সেনা সদস্যরা এরই মধ্যে বন্যাকবলিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া নিজ থেকে যেন লোকজন নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান, এ আহ্বান জানাচ্ছি।’

Advertisement

সরকার বন্যাদুর্গত লোকজনের পাশে রয়েছে জানিয়ে ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের সবধরনের সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনা অনুযায়ী ত্রাণসহায়তাসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।’

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেলেও যেসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ছিল রাতের মধ্যে তা বেড়ে গলাসমান হয়ে গেছে। ফলে শুক্রবার সকালে অনেক মানুষকে ঘরের চালায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও তারা থাকতে পারছেন না। নৌকা না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করছে। অন্যদিকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সারি নদের একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানিও প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে বলে জানান তিনি।

Advertisement

বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বানবাসি অনেক লোকজন বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন। তারা খাবার ও পানি সংকটে ভুগছেন। অনেকে ত্রাণও পাচ্ছেন না। এতে তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি যত বাড়ছে, সংকটও তত বাড়ছে।

স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, সিলেট নগরের শতাধিক এলাকার পাশাপাশি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, সদর, জৈন্তাপুর, বালাগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েক হাজার গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কমপক্ষে ১৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চলাচলের জন্য মিলছে না নৌকা। ফলে জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে বেরোতে পারছেন না।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করছে। অন্যদিকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলাও জেলা শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

সিলেট নগরের নবাবরোড, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, উপশহর, তেরোরতন, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, কলাপাড়া, ডহর, বেতেরবাজার, মোকামবাড়িবাজার, নগরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালিঘাট, কাজিরবাজার, তোপখানা, কোতোয়ালি থানা, এলজিইআরডি অফিসসহ শতাধিক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এসব এলাকার অনেক রাস্তায় কোমর ও পেটসমান পানি থই থই করছে। ক্লিনিক, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ, বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। বালু-মাটি মিশ্রিত হলুদ বর্ণের এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

সিলেটর জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুবা নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। খাদ্যসংকট দূর করতে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীও বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

ছামির মাহমুদ/এসআর/জিকেএস