ইতালিতে প্রথমবারের মতো ৪৪ বছর বয়সি ফ্রেডরিকো কার্বনি চিকিৎসকদের সহায়তায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গলা থেকে নিচ পর্যন্ত পক্ষাঘাতে অসাড় হয়ে গিয়েছিল তার শরীর। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) ওই অসুস্থ মানুষটি আত্মহত্যা করেন।
Advertisement
ইতালির আইন অনুযায়ী, কারও মৃত্যুতে সাহায্য করা অপরাধ। কিন্তু ২০১৯ সালে সাংবিধানিক আদালত জানিয়ে দেন, সামান্য কিছু ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে তার জন্য কঠিন শর্ত পালন করা জরুরি।
জানা গেছে, বিশেষ মেশিনের সহায়তায় তার শরীরে মৃত্যুর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। তার অন্তিম শয্যায় তার বন্ধু ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
ফ্রেডরিকো কার্বনির মৃত্যুর ঘোষণা করে লুকা কসিওনি অ্যাসোসিয়েশন। এ সংস্থাটি ইউথেনেশিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যুর সমর্থনে প্রচার চালায়। কার্বনির বিষয়টি নিয়েও তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিল।
Advertisement
ফ্রেডরিকো কার্বনি ছিলেন অবিবাহিত ট্রাক চালক। প্রায় দশ বছর আগে দুর্ঘটনার পর তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন।
লুকা কসিওনি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে কার্বনি বলেছেন, ‘এভাবে জীবন থেকে বিদায় নিতে আমার আক্ষেপ হচ্ছে। কিন্তু বাঁচার জন্য আমি সবরকম চেষ্টা করেছি। আর সম্ভব নয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে জীবনের শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছি। আমি সমুদ্রে নৌকার মতো ভাসছি।’
কার্বনির জন্য ২৪ ঘণ্টা সাহায্যকারী থাকতেন। স্বাধীনভাবে তিনি কিছুই করতে পারতেন না। বিদায় নেয়ার আগে তিনি বলেন, ‘এখন আমি যেখানে খুশি উড়ে যেতে পারবো।’
২০১৯ সালে ইতালির সুপ্রিম কোর্ট কিছু ক্ষেত্রে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও রক্ষণশীল দলগুলো এর বিরোধিতা করে।
Advertisement
আদালত তাদের নির্দেশে বেশ কিছু মাপদণ্ড ঠিক করে দেন। সেই মাপদণ্ড মেনেই একমাত্র চিকিৎসকদের সহায়তায় জীবন দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
অন্যতম মাপদণ্ড হলো, রোগী আর কখনো ভালো হবেন না, তিনি জীবনধারণের জন্য সবসময় অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকবেন এবং শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে তিনি অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন। আর তার এই চেতনা থাকবে যে, তিনি নিজের মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবেন।
কার্বনি গত নভেম্বরে এথিক্স কমিটির কাছ থেকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি পান। তারপর তিনি জীবন শেষ করে দেয়ার জন্য পাঁচ হাজার ইউরোও জোগাড় করেন। ড্রাগ ও মেশিনের জন্য ওই পরিমাণ অর্থ জরুরি ছিল তার।
সুইজারল্যান্ডে কয়েক দশক ধরে সহায়তায় আত্মহত্যার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, স্পেন এবং বেলজিয়ামসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশেও এই অনুশীলনটি বৈধ।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে, নিউইয়র্ক টাইমস
এসএনআর/এমএস