মতামত

পদ্মা সেতু নিয়ে কেন এত নেতিবাচক কথা?

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। এটা এখন বাংলদেশের জাতীয় সম্পদ। এ সেতু আমাদের অহংকার। ষড়যন্ত্র পদদলিত করে বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়ানোর প্রতীক। সেতুটি যখন ভ্রুণে রূপ নিতে চলছিল তখন থেকে এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বাংলার মা যাতে পদ্মা সেতুর মতো একটি গর্বের সন্তান জম্ম দিতে না পারে তার জন্য শুরু হয়েছিল নানামুখী ষড়যন্ত্র, বাধা ও অপপ্রচার। স্বাধীনতাবিরোধী ও একশ্রেণির বিকৃত মানসিকতার ব্যক্তিরাই দেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে এ ষড়যন্ত্র করেছিল।

Advertisement

বিশ্বব্যাংকের টাকায় পদ্মা সেতু হওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রকল্প তৈরি করা হয়। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার সাথে এগ্রিমেন্টও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু দেশের মধ্যে একদল কুচক্রী মহল এ সেতুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তার সাথে যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। তারা প্রচার করতে থাকে সেতু নির্মাণে শুরু থেকেই দুর্নীতি হয়েছে। অভিযোগ আছে, তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা আছে বাংলাদেশের এমন একজন ব্যক্তি বিশ্বব্যাংকের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে সেতু নির্মাণে যোগাযোগমন্ত্রী, সচিব, পিডি ও অন্য সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতি করেছেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়। সাথে সাথে এডিবি, আইডিবি ও জাইকাও পদ্মা সেতুতে তাদের বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়। দেশে ও কানাডায় দুর্নীতি মামলা হয়। দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কানাডার আদালত কানাডিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক আনীত দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা বলে রায় দেয়। বিশ্বব্যাংকের কাছেও কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছিল না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি সংসদে দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা দেন, পদ্মা সেতু অবশ্যই হবে এবং তা নিজস্ব টাকায়। বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থার কাছ থেকে ঋণ বা সাহায্য নিয়ে পদ্মা সেতু করবেন না। যেই কথা সেই কাজ।

Advertisement

সেতু নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। অভিজ্ঞ ও দক্ষ চাইনিজ কোম্পানি কাজ পায়। অত্যন্ত উঁচুমানের নকশা অনুযায়ী সেতুর কাজ শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের অক্টোবরে মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন। সেদিন আমিও উপস্থিত ছিলাম।

সেতুর কাজ বন্ধ করতে না পেরে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র, মিথ্যা ও অপপ্রচার অব্যাহত রাখে। তারা বলতে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের সামর্থ্য নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের। আরও বলেছেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করছে। ওই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। কারও ওই সেতুতে ওঠা ঠিক হবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি।

নির্মাণ যখন অনেক দূর এগিয়ে যায় তখন বিকৃতমনা ষড়যন্ত্রকারীদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা কৌশলে প্রচার করে যে পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথা লাগবে। ওই গুজব ছড়িয়ে দিয়ে দেশব্যাপী জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ছেলে ধরার মিথ্যা অভিযোগ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানারকম অঘটন ঘটায়। ঢাকার বাড্ডায় এক মা তার কন্যাসন্তানকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে ছেলে ধরার অভিযোগে জনগণ কর্তৃক আটক হয়। নির্মম শারীরিক নির্যাতনে তার করুণ মৃত্য হয়। শিশুটি হয়ে যায় মা হারা।

সেতুর কাজ শেষ। যাতায়াতের জন্য আগামী ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। এখন ষড়যন্ত্রকারীরা প্রচার করছে ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু নির্মাণে সরকার খরচ করেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কেউ কেউ বলছেন, ৫০ হাজার কোটি এবং কেউ কেউ বলছেন ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তারা প্রচার করছেন যে সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেটে টাকা যাওয়ায় সেতু নির্মাণের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার ও সরকারি লোকজন এই সেতু নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে এবং অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

Advertisement

কেউ কেউ বলছেন অর্থনৈতিক লাভ-লোকসান জরিপ না করে সেতু নির্মাণ করায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, জনগণের টাকায় সেতু নির্মাণ না করে ঋণ নিয়ে সেতু নির্মাণ করলে ভালো হতো। নির্মাণ ব্যয়ের বড় অংকের টাকায় অন্য প্রকল্প করা যেত। সমালোচকদের সমালোচনা ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সরকারি দলের নেতারা বক্তব্য রাখছেন। তবুও সাধারণ জনগণের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে মিথ্যাচারকে সত্য বলে মনে করতে পারে। আমার এ লেখনিতে আমি কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।

প্রথমেই আসা যাক সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রসঙ্গে। দেশের ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের। পদ্মা নদীর ওপর সেতু না থাকায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের ঢাকা আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি, সময় অপচয় এবং শিল্প ও বাণিজ্য সেক্টরে অনগ্রসরতার কথা বিবেচনা করলে পদ্মা নদীর ওপর সেত নির্মাণের দাবি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ছিল।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে বিশেষজ্ঞ দল দ্বারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে। পাঁচ বছরে তারা সেতু নির্মাণে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সেতুর নকশা তৈরি করে। ওই বছর আগস্ট মাসে একনেক সভায় সেতু নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অনুমোদিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি।

২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযোজনের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক সেতুর ওপরের তলায় মোটরযান সড়ক এবং নিচ তলায় রেলপথ রেখে দোতলা সেতু নির্মাণের নকশা তৈরি করা হয়।

রেলপথ সংযোজন করে সেতুর নকশা পরিবর্তন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন, সংযোজন ও সময়ক্ষেপণের জন্য নির্মাণ ব্যয়ের প্রাক্কলনও বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালে প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকায়। ২০১৬ সালে ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়। ২০১৮ সালে মূল সেতু, নদীশাসন, জমি অধিগ্রহণ, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, কর্মীদের বেতন সব মিলিয়ে তৃতীয়বারের মতো পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার কর্মী কাজ করে। ২০০৭ সালে মার্কিন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৬৮.৬৫ টাকা। ২০১৮ সালে ওই হার ৮৪.৮০ টাকা। বর্তমানে ৯০ টাকার বেশি।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এটা একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। শুধু পদ্মা সেতু নয় প্রায় সব প্রকল্পেই এটা দেখা যায়। প্রকল্পের রিভাইজড ব্যয় সব সময়ই বৃদ্ধি পায়। মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের হার পরিবর্তনে এ রকম হয়।

পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ ছাড়াও আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। সেতুটি তৈরি করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এ ধরনের ব্রিজ নির্মাণের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। একদল বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সেতুটি নির্মাণ করেন। নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যখন যে পরিবর্তন, সংযোজন করেছে সেটাই করা হয়েছে। পরিবর্তনের কারণেই ব্যয় বেড়েছে। ব্যয় বাড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের প্রকৌশলী বা প্রকল্প পরিচালকের কোনো হাত নেই। কাজেই দুর্নীতির কারণে ব্যয় বেড়েছে এ কথা বলার সুযোগ নেই। যারা দুর্নীতির কথা বলেন তারা সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই এ অপপ্রচার করে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন।

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় সেতুটি নির্মিত হয়েছে। পদ্মা একটি অত্যান্ত খরস্রোতা নদী। নদীর তীব্র স্রোতের কারণে নির্মাণকাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল। কখনো কখনো ব্যাহত হয়েছে। কোনো কোনো পাইলিংয়ে ১৩০ ফুট পর্যন্ত মাটির নিচে যেতে হয়েছে। পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ। আল্লাহর রহমতে সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরণ করে ব্রিজটি সফলভাবে নির্মিত হয়েছে।

ষড়যন্ত্রকারীদের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় তাদের উচিত ছিল জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। বিশ্বব্যাংকের উচিত ছিল দুঃখ প্রকাশ করা এবং যারা তাদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছিল তাদের পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তা হয়নি। তাই ওই কুচক্রী মহল এখনও নানাভাবে মিথ্যাচার করে দুর্নীতির অভিযোগের ঢোল বাজিয়েই যাচ্ছে।

যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারা এখনো স্বাধীনতাকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারেনি। দেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। জনগণ সুখে শান্তিতে থাকলে তাদের ঈর্ষা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য তারা দেশের যে কোনো স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।

সেদিন একটা বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য বলতেছিলেন পদ্মা সেতু নিয়ে মিডিয়া খুব ফলাও করে প্রতবেদন প্রচার করছে। লাইট জ্বলছে তাও প্রতিবেদন হয়। কথাগুলো অনেকটা ব্যঙ্গভাবে বলার চেষ্টা করেছেন। আসলে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না যে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। তাই পদ্মা সেতুর কথা উঠলে তাদের ভালো লাগে না। একটি কথা আছে, “যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা”। তাদের কথায় ও আচরণে তাই প্রকাশ পায়। এ কারণেই পদ্মা সেতু নিয়ে মহলবিশেষের এত নেতিবাচক কথা।

তারা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। তারা জোড়াতালি দিয়ে সেতু তৈরি করছে। ওই সেতুতে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এ সব কথা একজন অর্বাচীন বলতে পারে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা ব্যক্তি এ ধরনের কথা বললে তা অত্যন্ত লজ্জাকর। তাদের জ্ঞান গরিমা ও যোগ্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগে।

যারা বলেন অর্থনৈতিক সমীক্ষা না করে সেতু নির্মাণ করায় এ সেতু অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হয়নি। তাদের কথা শুনেও আমরা বিস্মিত হই। সরকার তো ব্যবসা করবে না। সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। একুশটি জেলার প্রায় ৪ কোটি লোকসহ আরও অধিকসংখ্যক লোক এই সেতুর সুবিধাভোগী হবে। তাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পণ্য পরিবহন, পণ্যের মূল্য, শিল্প ও বাণিজ্যের পথ উন্মোচিত ও সম্প্রসারিত হবে। জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা না করে তারা অর্থনৈতিকভাবে আর্থিক লাভের ধোয়া তোলেন। এরা নাকি রাজনীতিবিদ। রাজনীতিবিদরা তো জনগণের কল্যাণকেই প্রাধান্য দেবেন।

যারা বলেন বিদেশ থেকে ঋণ না নিয়ে নিজস্ব টাকার সেতু করায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে। তাদের এ কথার অর্থ কি? তারা কি চায় বাংলাদেশ চিরদিন আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকুক। যদি কোনো ব্যক্তির নিজের টাকা থাকে সেক্ষেত্রে সে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করবে না। ঋণের সুদ অনেক টাকা। প্রতি বছর ঋণের যে সুদ দেওয়া লাগতো এখন সে টাকা অন্য উন্নয়নে ও কল্যাণে খাটানো যাবে। কাজেই এমন বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লোক রাজনীতি করলে তাদের দ্বারা জনগণের কল্যাণ হবে না। তারা ব্যবসা করে আখের গোছাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্পাত কঠিন মনোবল, অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও অন্যায়- অপবাদ- ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোবল ও দেশপ্রেমের চেতনার কারণেই পদ্মা সেতু নিজের টাকায় নির্মিত হয়েছে। ২৫ জুন ২০২২ তারিখে সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। জাঁকজমকভাবে সেতুর প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। কিন্তু সমালোচকরা এ জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনকেও প্রশ্নবৃদ্ধ করছেন। তারা আবোল তাবোল বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের ভাষায় জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধন হবে বাড়াবাড়ি ও টাকার অপচয়।

পদ্মা সেতু বাঙালির গর্বের সম্পদ। অহংকারের ধন। এ সেতু দিয়ে চলাচলের জন্য কোটি কোটি জনতা অধীর আগ্রহে উদগ্রীব হয়ে আছে। তারা কাউন্ট ডাউন করে উদ্বোধনের দিনটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেতুর সাথে মানুষের আবেগ ও অহংকারের বিষয়টি জড়িত। অথচ সমালোচকরা জনগণের আবেগের মর্যাদা দিচ্ছে না। তাদের মিথ্যা ও নেতিবাচক কথায় জনগণের উচ্ছ্বাসকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এ কথা উপলব্ধি করে সমালোচক মহলকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে অহংকার করা উচিত। মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পদ্মা সেতুকে খাটো করে দেখার অপ্রয়াস থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে তারা জনগণের কাছে অপ্রিয় ও অগ্রহণীয় হয়ে জনবিচ্ছিন্নই থাকবে।

লেখক: সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ।

এইচআর/জেআইএম/ফারুক