মতামত

জয়তু আওয়ামী তৃণমূল

কোভিড প্যান্ডেমিকের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানো, ছুটে চলা বাংলাদেশের প্রতীক যদি পদ্মা সেতু বলা হয় তবে তা ভুল হবে না ঠিকই, কিন্তু বাঙালি জাতির এ অসামান্য অর্জনটি বোধ করি খাটো করে ফেলা হবে আর সাথে খাটো করে দেখা হবে সেই মহীয়সী নারীর অবদানকে, যিনি বাংলাদেশর অর্থনীতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা।

Advertisement

পদ্মা সেতু শুধু বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীকই নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির স্মারকও বটে। এটি বাংলাদেশের আইকন। আগামীতে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ ঢের বেশি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে, যার বেশিরভাগই হবে পদ্মা সেতুর চেয়ে ঢের বড়। কিন্তু একাত্তরের ধংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবারও পঁচাত্তরের পর থেকে ক্রমাগত পেছনে ছুটতে থাকা বাংলাদেশ যে সত্যি সত্যি ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারো একদিন বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তা ছিল চিন্তারও অতীত।

হেনরি কিসিঞ্জারের বাসকেট কেস নাটকের সফল মঞ্চায়নের সব উদ্যোগ যখন বাংলাদেশের নাট্য মঞ্চে চূড়ান্ত, ঠিক তখনই ডুবন্ত এ দেশটিকে টেনে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুধু বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনেই তোলেননি, একে সযত্নে লালন-পালন করে তৈরি করেছেন। আজকের রূঢ় বৈশ্বিক বাস্তবতায় বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর জন্য।

আজকের বাস্তবতায় তাই এ কথা অস্বীকার করার সামান্যতম সুযোগও নেই যে আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা শুধুই শেখ হাসিনার অবদান। এ বাস্তবতাটাকে চিৎকার করে স্বীকার করতে আমরা সুশীলরা মাঝে মাঝে কেন যেন দ্বিধায় ভুগি, যুক্তি খুঁজি অন্য কাউকে কোন খোঁড়া যুক্তিতে হলেও সামনে টেনে এনে নেত্রীকে আরেকটু পেছনে নিয়ে আসা যায় কি না। অথচ আমাদের যারা প্রতিপক্ষ সেই বাংলাস্তানিদের এ বিষয় ধারণা কিন্তু স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসায় বাধ সেধেছিল জিয়ার সরকার।

Advertisement

আর তারপর আবারো একই নাটকের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছিল ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন গংরাও। এর আগে পরে অসংখ্যবার প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়েছে তার ওপর রাষ্ট্রীয় মদতে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী সবাই নাম লিখিয়েছেন সেই খুনিদের তালিকায়। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি একবারও।

বরং সর্বশেষ যখন তাকে কারারুদ্ধ করা হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জমানায়, সেই পরাক্রমশালী সামরিক সরকারকে চূড়ান্তভাবে পদাবনত করে তিনি চিরস্থায়ী ভিত্তি দিয়েছেন এদেশে গণতন্ত্রকে। তার হাত ধরে এরপর থেকে একযুগেরও বেশি সময় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে নিরবছিন্ন পথচলা তার ছোটবড় সুফল ভোগ করেছি ছোটবড় আমরা সবাই। তারই ধারাবাহিকতায় আজ পদ্মার বুকে বাঙালির সেতু দৃশ্যমান।

সেদিন যখন নেত্রী কারা অন্তরীণে তখন আপসের পথে হেঁটেছেন অনেকেই। সেই আপস যাত্রায় শামিল হয়েছিলেন অনেক পেশাজীবী, অনেক সুশীল আর আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতাও। আপসের পথে শুধু হাঁটেনি আওয়ামী লীগের তৃণমূল। খুব দ্রুততম সময়ে পঁচিশ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সেদিন বাধ্য করেছিল শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে, মুক্তি দিতে গণতন্ত্রকে।

এই ক’দিন আগেই ১১ জুন তার কারামুক্তি দিবসে নেত্রীর কথায়ও ধ্বনিত হয়েছে একই বক্তব্য। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি সম্প্রতি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কোন রকম হাঙ্গামা ছাড়াই গত কয়েকটি মাসে গঠিত হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীনে আট শতাধিক ইউনিট কমিটি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ক্ষমতায়নের এই ধারাবাহিকতায় এখন শুরু হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন।

Advertisement

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হিসেবে আমার আমন্ত্রণ জুটেছিল। ক্যান্টনমেন্ট থানা ও ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার। আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যেও আমি নেত্রীর ১১ জুনের বক্তব্যেরই অনুরণন ঘটিয়েছি। জয়গান গেয়েছি আওয়ামী লীগের তৃণমূলের। এ তৃণমূলই ছিল বঙ্গবন্ধুর শক্তি, আর আজ তারা শক্তি জোগাচ্ছে শেখ হাসিনাকে, শক্তিশালী করছে বাংলাদেশকে।

আমার বক্তব্যের সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ। মঞ্চে তো বটেই মঞ্চের সামনেও ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা। সবাইকে দেখেছি আমার বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করতে। এটাই আওয়ামী লীগের শক্তি। কাজেই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও পদ্মা সেতুর দাঁড় উন্মোচন যখন পরপর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন আমার এই লেখাটা যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল বন্দনাময় হবে সেটা তো বলাই বাহুল্য।

লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

এইচআর/এএসএম/ফারুক