‘কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চার শিক্ষিকাকে হেনস্তার ঘটনায় আটক চারজন বখাটেসহ এ চক্রের সদস্যরা টিকটক ভিডিও বানানোর জন্য রাস্তায় স্কুলগামী মেয়েদের টার্গেট করতো। শুধু রাস্তাতেই নয়, স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস/পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতো। প্রতিবাদ করলে মেয়েদের অ্যাসিড নিক্ষেপ করে ঝলছে দেওয়ার হুমকি দিতো।’
Advertisement
বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, করিমগঞ্জের কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে কয়েক তরুণ প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। তারা মোবাইলে ছাত্রীদের ছবিও তুলতেন। গত রোববার (১২ জুন) বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার সময় ওই তরুণেরা বিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে ওই দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন। এ দৃশ্য দেখে চার শিক্ষিকা তাদের বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটেরা তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
এরপর ছুটি শেষে চার শিক্ষিকা অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ বাজার-সংলগ্ন তালিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে ওই বখাটেরা অটোরিকশার গতিরোধ করেন। পরে তারা শিক্ষিকাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, শ্লীলতাহানি ও অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন।
Advertisement
এ ঘটনায় ওই তরুণদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পরীক্ষা বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর এ ঘটনায় র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাতে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে চার তরুণকে আটক করে র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল। গ্রেফতাররা হলেন- প্রধান আসামি ও মূলহোতা আল-আমিন ওরফে সোহেল ওরফে ভিআইপি রানা ওরফে প্রিন্স রানা (২২), সৌরভ মিয়া ওরফে বাবু (১৭), সোহান ওরফে হিরা (১৭) ও সীমান্ত (১৭)।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার সোহেল ওরফে ভিআইপি রানা ওরফে প্রিন্স রানা এলাকায় উঠতি বয়সী কিশোরদের নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে এবং নেতৃত্ব দেয়। সে তার এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বেশ কিছুদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। চক্রের অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতো এবং এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে স্কুলগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো। এক্ষেত্রে কোনো ছাত্রী প্রতিবাদ করতে চাইলে অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি দিতো। স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলে গ্রেফতার সোহেলের নেতৃত্বে এ চক্রের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং রাস্তাঘাটে হেনস্তা করতো।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারদের মোবাইল দেখা গেছে, তাদের ইমো গ্রুপ ও টিকটকে মেয়েদের সঙ্গে জোর করে একাধিক টিকটকের ভিডিও আছে। তারা মূলত রাস্তা ও স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকটিকে ভিডিও ধারণ করতো। এতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে তাদের অ্যাসিড দিয়ে ঝলছে দেওয়ার হুমকি দিতো তারা।
টিটি/জেএস/এমএএইচ/জেআইএম
Advertisement