আইন-আদালত

বিচার বিভাগে বরাদ্দ দ্বিগুণ করার দাবি

আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিচার বিভাগ পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাই জাতীয় সংসদে ঘোষিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিচার বিভাগের বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এস এম আরিফ মন্ডল এ আবেদন জানান। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৪ জুন) জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী নিজেই। জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ এর মন্ত্রণালয়/বিভাগভিত্তিক বরাদ্দের সংশ্লিষ্ট নথি যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে রোববার (১২ জুন) এ আবেদন জমা দেন তিনি।

আইনজীবী জানান, আগামী অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিচার বিভাগ পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই বিভাগের বাজেট বৃদ্ধি করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত বিচারক ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা গেলে মামলাজটসহ বিচার বিভাগের নানা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তাই বিচার বিভাগের নানা সমস্যা উল্লেখ করে বাজেট বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই আবেদন করেছি।

Advertisement

আবেদনে বলা হয়, এ বছরে জাতীয় সংসদে ঘোষিত বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগের সর্বসাকুল্যে ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে অধস্তন আদালতের অন্যতম সংকট বিচারক স্বল্পতা ও লজিস্টিক সাপোর্ট। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো আদালতে দশ হাজারের বেশি মামলা চলমান রয়েছে। দেশে বিশ কোটি মানুষের বিপরীতে অধস্তন আদালত বিচারকের সংখ্যা এক হাজার ৮০০ জন। এ বিচারকদের মধ্যে বেশিরভাগ বিচারকই প্রয়োজনীয় লজিস্টক সাপোর্ট থেকে বঞ্চিত। বিচারিক আদালতের মামলা ব্যবস্থাপনার মূল সমস্যা তথা অন্তরায়গুলোর মধ্যে রয়েছে-

ক. দেওয়ানি আদালতে স্টেনোগ্রাফারের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পদের কর্মচারি না থাকা।

খ. উন্নত এবং যুগোপযোগী বিচারিক কর্মপরিবেশ না থাকা। অথচ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের চাকরির প্রথমদিন থেকেই থানা পর্যায়েও সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

গ. জেলা পর্যায়ে দেওয়ানি আদালতের বিচারকদের রায়/আদেশ কম্পিটার, প্রিন্টারসহ সংশ্লিষ্ট স্টেশনারি ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে নিজ হাতে লিখতে বাধ্য হন, ফলে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অনেক সময় অপচয় হয়। বিচারপ্রার্থীদের নকল পেতে বিলম্ব হয়। তাই সহকারী জজ থেকে জেলা জজ পর্যন্ত সব আদালতে প্রয়োজনীয় সংখক স্টেনো পদসহ ডেক্সটপ কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার মেশিন এবং ইন্টারনেট নিশ্চিত করা।

Advertisement

ঘ. ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো ব্যয়বহুল শহরে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধার অপ্রতুলতা রয়েছে, তাছাড়া বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের খরচে হিমশিম খেতে হয়। এ জন্য সব জেলায় বিচারকদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার

ঙ. অধস্তন আদালতের বেশিরভাগ বিচারকই তাদের কর্মস্থলে প্রতিদিন মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে যাওয়া-আসা করেন। উপজেলা পর্যায়ে বিচারকরা রিকশা বা হেঁটে তাদের কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করেন। গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনায় জীবন সংশয়ের সম্ভবনা থাকে আর সামাজিকভাবে মর্যাদাহানির শঙ্কাও থাকে। এক্ষেত্রে বিচারিক কর্মকর্তাদের গাড়ি ঋণ সুবিধার আওতায় আনা, যা অন্যান্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে চালু করা হয়েছে।

চ. অবকাঠামো, যানবাহন, আবাসিক সমস্যাসহ আদালত প্রাঙ্গণের অন্যান্য সমস্যাদির সমাধানের জন্য সরকারের অপরাপর মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী থাকতে হয় যা স্বাধীন বিচার বিভাগের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ছ. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উন্নত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্ক্ষিত সফলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিচারকদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও প্রশিক্ষণ বাড়ানো প্রয়োজন।

পার্শ্ববর্তী দেশের বিচারকদের বেতন-ভাতা, গাড়ি,নিরাপত্ত এবং আবাসিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তুলনা করলে দেখা যাবে তাদের তুলনায় আমাদের দেশের বিচারকদের সুবিধা অতি নগণ্য। মামলা নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টেও বিচারক স্বল্পতা বিদ্যমান। বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সক্ষমতা অর্জন করা আর এর প্রধান অন্তরায় বাজেটে প্রাপ্ত সীমিত অর্থ যা দেশের মোট বাজেটের তুলনায় অতি নগণ্য।

সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা পদে একজন করে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে সরকারি মামলা পরিচালনাসহ ক্রয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে। অন্যান্য দেশের মতো মোবাইল কোর্ট জুডিসিয়াল অফিসারের মাধ্যমে পরিচালিত হলে সাধারণ মানুষের আস্থা আরো বেশি বাড়বে।

ওই সমস্যাগুলো সমাধানে রাষ্ট্রপতির পরামর্শে আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনক্রমে বিচার বিভাগের জন্য এ বছরে ঘোষিত বাজেটকে কমপক্ষে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করছি। আবেদনের একটি করে অনুলিপি অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনমন্ত্রী, আইনসচিব, অর্থসচিব এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

এফএইচ/এমএএইচ/এমএস