দেশজুড়ে

এ যেন পদ্মার বুকে স্বপ্ন জয়ের প্রদীপ

প্রমত্তা পদ্মার বুকে থৈ থৈ জল। স্রোতের গর্জন আর ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়তেই নেমে আসে মৃদু অন্ধকার। অন্ধকার একটু গাঢ় হতেই একযোগে জ্বলে উঠলো পদ্মা সেতুর আলো।

Advertisement

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে সংযোজন করা বাতি জ্বলে উঠতেই বর্ণিল রেখার মতো পদ্মার পাড়ে যেন সৃষ্টি হয় ছায়াপথ। যে পথ দেখাচ্ছে স্বপ্ন জয়ের, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে ৪১৫ টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। মূল সেতুতে রয়েছে ৩২৮ টি ল্যাম্পপোস্ট। জাজিরা প্রান্তের উড়ালপথে (ভায়াডাক্ট) ৪৬টি এবং মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে বসানো হয়েছে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রথম পিলার থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন সংযুক্ত করে দিয়েছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং জোনাল অফিস (পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি)। আর শরীয়তপুরে জাজিরা নাওডোবা প্রান্ত থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার সেতুতে অর্ধেক বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

৪ জুন প্রথম বাতি জ্বালানো হয় পদ্মা সেতুতে। তখন সেতুর ২৪টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বলে। তবে সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় মাওয়া প্রান্ত থেকে মূল সেতু পর্যন্ত একযোগে ২০৭টি বাতি জ্বালানো হয়। এরপর আজ একসঙ্গে ৪১৫ বাতি।

Advertisement

পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় মাওয়া প্রান্তের পশ্চিম পাশের ভায়াডাক্ট থেকে মূল সেতু পর্যন্ত ২০৭ টি লাইট পরীক্ষামূক জ্বালানো হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৭টার সময় পদ্মার বুকে সেতুর ওপর একযোগে জ্বলে উঠলো সব বাতি।

পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্তের পদ্মার নদীশাসন বাঁধ, টোলপ্লাজাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সেতু নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস। সেতু দেখতে প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবারও পদ্মার নদী শাসন বাঁধে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেতুতে জ্বলে ওঠা আলোতে যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের চোখে-মুখে। এ যেন পদ্মার বুকে স্বপ্ন জয়ের প্রদীপ।

২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুর দ্বার।

পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা মো. ইসমাইল জাগো বলেন, ‘এ সেতু আমাদের গর্বের বিষয়। সন্ধ্যার পর সেতুতে আলো জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মাপাড়ে ভিন্নরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমরা এখন দিন গুনছি সেতু চালু হওয়ার। আমাদের কাছে ২৫ জুন হবে স্মরণীয় দিন।’

Advertisement

পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিশেষ করে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা, শিবচরের পদ্মাবেষ্টিত চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর চেহারা পাল্টে গেছে। নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন কমপক্ষে দেড় ডজন বাজার। পুরানো হাট-বাজারগুলোতে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। ফলে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের।

পদ্মা সেতুকে ঘিরে এ অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠবে নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাড়বে কর্মসংস্থান। কৃষি পণ্য নিয়ে যখন-তখন বিভিন্ন স্থানে সহজেই যেতে পারবেন কৃষকরা। এর ফলে উন্নত জীবনের হাতছানি দেখছেন পদ্মাপাড়ের মানুষরা।

একেএম নাসিরুল হক/এসজে/এএসএম