ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিনিয়তই কত ঘটনা ঘটে যায়। কত কিছুই না ইতিহাস হয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে ক্রিকেটের পাতায়। প্রায় দেড়শত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রতিদিনই জমছে নানা রকমের ঘটনা। সেই জমানো ইতিহাস থেকেই বের করে আনা হয় সংশ্লিষ্ট দিনটির উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয়।
Advertisement
আজ ১৩ জুন, ২০২২। ক্রিকেট ইতিহাসে এই দিনে ঘটেছে অনেকগুলো ঘটনা। যেগুলো তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য।
১৯৯৯: বিশ্বকাপটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে কেমন লাগছে?
‘বিশ্বকাপটাই তো হাত থেকে ফেলে দিলে, কেমন লাগছে হার্সেল?’ ধারণা করা হয়, ঠিক এই দিনটিতে স্টিভ ওয়াহর ক্যাচটা যখন হার্সেল গিবসের হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিল, তখন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক এগিয়ে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ফিল্ডারকে এ কথাটাই বলেছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে যা বিখ্যাত একটি ‘বক্তব্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।
Advertisement
ক্রিকেটে একটা কথা প্রায়ই প্রচলিত, ক্যাস মিস তো ম্যাচ মিস। কেউ ক্যাচ ফেলে দিলে তাকে বলা হয়, ম্যাচটাই তো হাত থেকে ফেলে দিলে!
১৯৯৯ সালের ঠিক এইদিনে লিডসের হেডিংলিতে বিশ্বকাপের সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় মানেই হলো অস্ট্রেলিয়ার বিদায়। সেমিতে উঠতে হলে অস্ট্রেলিয়াকে জিততেই হবে।
এমন পরিস্থিতিতে হার্সেল গিবসের সেঞ্চুরিতে (১০১) ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নামার পর অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মার্ক ওয়াহ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং ডেমিয়েন মার্টিন ফিরে যান ৪৮ রানের মধ্যে।
দল যখন দারুণ বিপর্যয়ে তখন রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে জুটি বাধেন স্টিভ ওয়াহ। দু’জন মিলে ১২৬ রানের অনবদ্য এক জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেন।
Advertisement
তবে, তার আগেই জুটিটা ভেঙে যেতে পারতো এবং অস্ট্রেলিয়ারও বিদায় ঘটতো। কারণ, স্টিভ ওয়াহ যখন ৫৬ রানে তখনই মিডউইকেটে ক্যাচ তুলেছিলেন তিনি। ফিল্ডার হার্সেল গিবস, যাকে এখনও ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু গিসব আনন্দের আতিশয্যে ক্যাচটা হাতের তালুতে জমানোর আগেই উল্লাসে মেতে ওঠেন; কিন্তু তার আগেই সেটা ফেলে দেন মাটিতে।
ওই সময়ই হার্সেল গিসবের কাঁধ চাপড়ে কথা বলেন স্টিভ ওয়াহ। পরে এ ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, স্টিভ ওয়াহ হার্সেল গিবসকে বলেছিলেন, ‘হাত থেকে তো বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে, কেমন লাগছে হার্সেল?’ যদিও স্টিভ ওয়াহ এবং হার্সেল গিসবের কেউই পরে আর এই বক্তব্য ভুল বলে মন্তব্য করেননি।
শেষ পর্যন্ত স্টিভ ওয়াহ অপরাজিত ১২০ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটের ব্যবধানে জয় এনে দেন। শুধু তাই নয় দক্ষিণ আফ্রিকার উপরে থেকেই সুপার সিক্স পর্ব শেষ করে তারা। এর চারদিন পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আবারও মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯০৫: ইংলিশ ব্যাটার দিলিপসিংজির জন্মদিন
ভারতের খাতিওয়ারের সারোদারে ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন ইংল্যান্ডের অন্যতম স্টাইলিস্ট ব্যাটার কুমার শ্রী দিলিপসিংজি। সবার কাছে দিলিপ নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ইংলিশ ব্যাটার। মূলতঃ ভারতবর্ষ থেকে ক্রিকেটে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলা একজন বিরল ক্রিকেটার তিনি।
দিলিপসিংজি ছিলেন ভারতীয় গ্রেট রঞ্জিতসিংজির ভাতিজা। দিলিপের সবচেয়ে অসাধারণ ইনিংস ছিল লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ১৭৩ রান। ১৯৩০ সালে এই ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। অ্যাশেজে দিলিপের এটাই ছিল প্রথম ইনিংস।
তবে, দিলিপকে পরাজিত দলেই থাকতে হয়েছিল সেবার। কারণ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ২৫৪ রানের ওপর ভর করে ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াই জয় তুলে নিয়েছিল।
মাত্র ১২টি টেস্ট খেলেন দিলিপসিংজি। তবে তার গড় ছিল ঈর্ষা জাগানোর মত, ৫৮ করে। কাউন্টিতে হোভে ১৯৩০ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে সাসেক্সের হয়ে একদিনেই তিনি খেলেছিলেন ৩৩৩ রানের একটি ইনিংস।
পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের হাই কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন দিলিপ। ১৯৫৯ সালে বোম্বেতে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
২০১৮: নারী ক্রিকেটে ব্যক্তিগত স্কোরের রেকর্ড
২০১৮ সালের এই দিনে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে নারী একদিনের ক্রিকেটে বিস্ময়কর রেকর্ড গড়েন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার অ্যামেলিয়া চার্লট কর। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নারী একদিনের ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের স্কোর গড়েন তিনি।
স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এদিন তিনি অপরাজিত ২৩২ রানের ইনিংস খেলেন। ১৯৯৭ সালে নারী ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বেলিন্ডা ক্লার্ক। ওই ইনিংসটি ছিল অপরাজিত ২২৯ রানের।
অ্যামিলিয়া কর ২৩২ রানের ইনিংসটি খেলেন মাত্র ১৪৫ বলে। ৩১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ২টি ছক্কার মার। বেলিন্ডা ক্লার্ক ২২৯ রান করেছিলেন ১৫৫ বল খেলে। তার ইনিংসে ছিল ২২টি বাউন্ডারি। কোনো ছক্কা ছিল না।
এমেলিয়া করের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে নিউজিল্যান্ড সেদিন সংগ্রহ করেছিল ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৪০ রান। জবাবে ১৩৫ রানে অলআউট হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড জয় পায় ৩০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে।
১৯৯১: লকি ফার্গুসনের জন্মদিন
বর্তমান সময়ে এত দ্রুতগতিতে সম্ভবত আর কোনো পেস বোলারই বোলিং করেন না। নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন নিয়মিতই ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করে তাকেন। এবার আইপিএলেও সর্বোচ্চ গতিতে (১৫৭+ কি. মি) বল করার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
লকি ফার্গুসনের আজ জন্মদিন। ২০১৯ বিশ্বকাপে ১৯.৪৭ গড়ে মোট ২১টি উইকেট নিয়েছিলেন লকি ফার্গুসন। এর মধ্যে ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই নিয়েছেন ৩ উইকেট।
২০১৬ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ফার্গুসনের এবং নিজের প্রথম ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট দিয়ে তার যাত্রা শুরু। ২০১৮ সালে ১৯ উইকেট নেন তিনি মাত্র ৯ ওয়ানডেতে। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরেই ঘটে টি-টোয়েন্টি অভিষেক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অকল্যান্ডে ২১ রানে নেন ৫ উইকেট। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা।
২০২১: ঘরের মাঠে প্রথম সিরিজ হার ইংল্যান্ডের
২০২১ সালের এই দিনে, ২০১৪ সালের পর ঘরের মাঠে প্রথম সিরিজ পরাজয় ঘটে ইংল্যান্ডের। ইংলিশদের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার জের ধরে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হয় জো রুটের দল।
এজবাস্টনে এই ম্যাচে নিয়মিত একাদশের ৬জনকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। একইসঙ্গে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও খেলতে পারেননি এই ম্যাচে। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ৩০৩ রান। জবাবে ৩৮৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে আইজাজ প্যাটেল, ম্যাট হেনরি, নেইল ওয়েগনার এবং ট্রেন্ট বোল্টদের বোলিংয়ে ১২২ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। জবাবে মাত্র ৩৮ রানের লক্ষ্য পায় কিউইরা। ২ উইকেট হারিয়েই তারা জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
১৯৭২: ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়
৪২ বছর ধরে ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিততে পারে না ইংল্যান্ড। এটা যেন তাদের জন্য একটা অভিশাপ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। একটা-দুটা বছর নয়, টানা ৪২টি বছর। অবশেষে ১৯৭২ সালের এইদিনে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ঐতিহাসিক জয়টি পেলো ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ৮৯ রানে।
৪২ বছরের খরা কাটিয়ে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিততে পারলো তারা। এটা ছিল জন স্নো এবং জিওফ আর্নল্ডের ম্যাচ। তাদের বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ডের হয়ে এই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল টনি গ্রেগের। দুই ইনিংসেই তিনি ছিলেন ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ রান স্কোরার। ৫৭ এবং ৬২। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
এইদিনে আরও জন্মগ্রহণ করেছিলেন
* ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড), ১৯৭০* মানিন্দর সিং (ভারত), ১৯৬৫* জর্জ গুন (ইংল্যান্ড), ১৮৭৯* নেভিল টাফনিল (ইংল্যান্ড), ১৮৮৭* রয় মিনেট (অস্ট্রেলিয়া), ১৮৮৮* ইসমে এরইউন (ইংল্যান্ড), ১৯৩১* অঙ্গুস ম্যাকেই (জিম্বাবুয়ে), ১৯৬৭* শন ইয়ং (অস্ট্রেলিয়া), ১৯৭০* অ্যালেক্স টেইট (নিউজিল্যান্ড) ১৯৭২* ইয়ান রেডপাথ (অস্ট্রেলিয়া), ১৯৭৬
আইএইচএস/