যানজটে ঢাকার জীবন দিন দিনই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সকালের আলো ফোটার আগেই শুরু হওয়া জ্যাম কমছে না মধ্যরাতেও। দুই কোটি মানুষের এ শহরে যানজট কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে চলার পথে কর্মব্যস্ত মানুষের প্রতিদিনকার ভোগান্তিই তার বাস্তব চিত্র। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা। রোদে, ঘামে আর গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রীর ঠাসাঠাসিতে নাকাল রাজধানীবাসী। দিন দিন এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
Advertisement
সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতো সোমবারও (১৩ জুন) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ছিল তীব্র জ্যাম। ব্যস্ততম সড়কে মিনিটের পর মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে গাড়িগুলো। এতে সময় ও অর্থ যেমন নষ্ট হচ্ছে, মানুষের দুর্ভোগও ছাড়িয়ে যাচ্ছে সহনীয়তার সব সীমা। শহরের বাসিন্দারা প্রতিদিনের যানজটের কবলে পড়ে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে প্রায় সব পরিবারে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। বাড়ছে মানসিক সমস্যাও। এর মধ্যে যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি নারী-শিশুদের।
এদিন রাজধানীর তেজগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, এফডিসি মোড়, মগবাজার, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন ও মতিঝিলের মতো ব্যস্ততম সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকেই আধা ঘণ্টার পথ যাচ্ছেন এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। কর্মজীবীরা গাড়িতে বসে বারবার শুধু ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাচ্ছেন। সময়মতো অফিসে যাওয়াই যেন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন গন্তব্যমুখী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যানজটের কথা মাথায় রেখে অনেকে আগেভাগে বাসা থেকে বের হচ্ছেন। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিনই রাস্তায় দুর্ভোগ বাড়ছে। অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। যথাযথ নগর পরিকল্পনা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন ছাড়া এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি নেই, মনে করেন যাত্রীদের অনেকে।
Advertisement
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময় জানিয়েছেন, অনেকে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপের মতো শারীরিক নানা সময় নিয়ে প্রতিদিন রাস্তায় বের হন। ভাবেন, আজ বুঝি রাস্তা একটু ফাঁকা থাকবে! কিন্তু পরক্ষণেই তাদের সে ভাবনায় ছেদ পড়ে। একে তো তীব্র যানজট তার ওপর অসহ্য গরমে তাদের একই অভিজ্ঞা নিয়েই চলতে হয়। এতে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, যাত্রীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
ঢাকায় যানজট পরিস্থিতির উত্তরোত্তর অবনতি ঘটছে। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকাই যেন এ শহরের বাসিন্দাদের নিত্যদিনের নিয়তি। যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আজ এই সড়কে রিকশা বন্ধ, তো কাল আবার খুলে দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতির কারণে খোঁড়াখুঁড়িও শেষ হচ্ছে না। সড়কের দুপাশে অবৈধ পার্কিং তো রয়েছেই। এসব অসঙ্গতির বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিনশেষে পুরস্কার হিসেবে নগরবাসীর ভাগ্যে জুটছে শুধু ভোগান্তিটুকুই।
সোমবার ঢাকার অন্যান্য সড়কের মতো বাড্ডা প্রগতি সরণি, নতুনবাজার, নর্দা, কুড়িল বিশ্বরোড, বনানী, মহাখালী, নাবিস্কো, সাতরাস্তা এলাকায়ও দেখা গেছে যানবাহনের তীব্র জটলা।
ধানমন্ডি থেকে গুলশানের নেপাল দূতাবাসে কাজে এসেছেন মো. সাব্বির। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সকালে নেপাল দূতাবাসে যাওয়ার জন্য ধানমন্ডি থেকে গুলশানের দিকে রওনা হই। রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল, ৩০-৪০ মিনিটের পথ যেতে দেড় ঘণ্টার বেশি লেগেছে। যানজটের মধ্যে অসহনীয় গরম ভীষণ ভুগিয়েছে।
Advertisement
যাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের বড় কারণ চালকদের যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো। এছাড়া মেট্রো রেলসহ সড়কে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতিও যানজট বাড়াচ্ছে। তবে প্রতিদিনের মতো আজও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে।
এইচএআর/এমকেআর/এএসএম