জাতীয়

বিশ্বে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ: কৃষিমন্ত্রী

বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

Advertisement

জাতীয় ফলমেলা উপলক্ষে সোমবার (১৩ জুন) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী নীতি প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস, জনসংখ্যার আধিক্য, জমিতে লবণাক্ততা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

মন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে, বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে।

Advertisement

‘কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধানফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে, আগে হতো ৫৬ প্রজাতির৷’

এতে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু দানাজাতীয় শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমেছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাথাপিছু ফল গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এতে ফলের চাহিদা বেড়ে গেছে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল গ্রহণের হার ছিল ৫৫ গ্রাম যা বেড়ে ২০১৮ তে হয়েছে ৮৫ গ্রাম।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন। আর বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক কোটি ২২ লাখ টন। বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ।

বর্তমানে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রামের বিপরীতে প্রাপ্যতা ৮৫ গ্রাম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। একমাত্র নিরাপদ ফলই আমাদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশে চাষোপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ কৃষক পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে এবং দেশীয় ফলের চাষ সম্প্রসারণসহ উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশীয় ফলের সঙ্গে বিভিন্ন বিদেশি ফলের চাষ আস্তে আস্তে বাড়ছে।’

‘বিদেশে টাটকা ও প্রক্রিয়াজাত ফলের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে সীমিত আকারে টাটকা ফল রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের সুস্বাদু আমের রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক। আমরা রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছি। রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) মেনে উৎপাদন, ফল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, রপ্তানি উপযোগী জাতের ব্যবহার, আধুনিক প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপনসহ নানান কাজ চলমান আছে।’

মে থেকে আগস্ট সময়ে ফলের প্রাপ্যতা সন্তোষজনক থাকলেও বছরের অন্য সময়ে চাহিদা পূরণে আমদানির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট ফল উৎপাদনের শতকরা ৫৪ ভাগ এবং সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাকি আট মাস শতকরা ৪৬ ভাগ ফল পাওয়া যায়।’

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ফসলভিত্তিক আয়ের আনুমানিক প্রায় ১০ শতাংশ ফল থেকে আসে বলেও জানান মন্ত্রী।

ফল মেলা শুরু ১৬ জুন

গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে জাতীয় ফল মেলা করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে আগামী ১৬ জুন থেকে জাতীয় ফল মেলা শুরু হবে। মেলা চলবে ১৮ তারিখ পর্যন্ত। এবারের প্রতিপাদ্য- বছরব্যাপী ফল চাষে, অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’

মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে এবং রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল কিনতে পারবেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন দেশি ফলের প্রদর্শনীর মাধ্যমে মেলায় অংশগ্রহণ করবে বলেও জানান আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ফল মেলা ২০২২ সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে ফল উৎপাদন, সংগ্রোহত্তর নষ্ট/পচন রোধ, বিপণন ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে বলে আশা করি।’

আরএমএম/এমএইচআর/এএসএম