ফিচার

সাপের খামার গড়ে তুলতে যা জানতে হবে

সাপ নিয়ে যেমন ভীতি আছে, তেমনি অনেক দেশে সাপের কদরও রয়েছে। অনেকে অন্য পশুপাখির মতো বাড়িতেও সাপ পোষেন। শখের বশে অনেকেই এটা করেন। যদিও বেশিরভাগ সময় সেসব সাপের বিষ থাকে না। তবে বিষধর সাপও লালন-পালন করা হয়। শুধু পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন, এদের পালন করা হয় খামারে। বিশ্বে সাপের দাঁত, চামড়া, বিষের চাহিদা থাকায় অনেক দেশে সাপের খামার গড়ে উঠেছে।

Advertisement

আমাদের দেশে ২০০৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বেসরকারি পর্যায়ে সাপ ও কুমিরের খামার স্থাপনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করলে এর আলোকে অনেকে আবেদন করেন। তবে বন বিভাগের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতপার্থক্য থাকায় সেই আবেদনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তারপরও বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড় সাপের খামার গড়ে উঠেছে। অনেক তরুণ সাপের খামার করে স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তা হওয়ার।

আমাদের দেশে জটিলতা থাকলেও বিশ্বের অনেক দেশেই সাপের খামারের অনুমোদন আছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য সাপের খামার। বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও চীনে সবচেয়ে বেশি সাপের খামারের সংখ্যা অনেকবেশি। ওই দেশগুলোতে সাপের ব্যাপক চাহিদা। সাপের মাংসের স্যুপ চীনে জনপ্রিয় খাবার। এছাড়াও সাপের বিষ, দাঁত ও চামড়ারও ব্যাপক চাহিদা আছে সেখানে।

সাপের বিষ ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ওষুধ ও প্রতিষেধক হিসেবে। যেগুলো আবার ব্যবহার হয় সাপের কামড়ের পর বিষের প্রতিক্রিয়া কমাতে। বাংলা প্রবাদ বিষে বিষক্ষয় হয়তো এসেছে এখান থেকেই। এছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সাপের মাংসের নানা পদ রান্না করে খাওয়া হয়।

Advertisement

সাপচাষ খুবই লাভজনক ব্যবসা। যদিও জীবনের ঝুঁকি আছে অনেক বেশি। সাপের খামার গড়ে তোলার জন্য নাইজেরিয়া, ঘানা, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এমনকি বাংলাদেশ খুবই ভালো জায়গা। বিশ্ববাজারে সাপের বিষের চাহিদা এখন তুঙ্গে।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বছরে লাখ লাখ ডলার খরচ করে সাপের বিষ কিনছেন। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে সাপের বিষ। এমনকি ক্যানসার নিরাময়ে সাপের বিষ ব্যবহার নিয়ে চলছে গবেষণা। এটি ঠিক থাকলে সাপের বিষের চাহিদা বাড়বে আরও অনেক বেশি।

পুষ্টিকর খাদ্যের সম্পূরক তৈরিতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো সাপের পিত্তথলি, যকৃত এবং চামড়া ব্যবহার করে। পাইথনের মতো সাপের চামড়া ফ্যাশন শিল্পে এখন খুবই জনপ্রিয়। জেনে নিন কীভাবে সাপের খামার গড়ে তোলা যায় সহজেই-

আইনি জটিলতাআপনি কোথায় আছেন তার উপর নির্ভর করে সাপের চাষ বৈধ বা অবৈধ হতে পারে। হতে পারে আপনি যেখানে আছেন সেখানে এটি অবৈধ, কিন্তু আপনার পাশের শহর বা অঞ্চলে তা বৈধ। বাংলাদেশে সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে কাজটি শুরু করার সুযোগ আছে।

Advertisement

উপযুক্ত স্থান নির্বাচনসাপের খামার গড়ে তুলতে প্রথমেই আপনাকে একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। যে স্থানে আপনি সাপের খামার করতে যাচ্ছেন তার আশপাশের মানুষের নিরাপত্তা আগে চিন্তা করতে হবে। মানুষের প্রাণহানি এড়াতে লোকালয় ছেড়ে একটু বিচ্ছিন্ন জায়গায় বেছে নেওয়াই ভালো। এছাড়াও তাপমাত্রা বিবেচনা করুন। সাপের জন্য দিনে ২৪-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে প্রায় ২১-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন।

সাপ সংগ্রহএর পরের ধাপ হচ্ছে খামারের জন্য সাপ সংগ্রহ করা। আপনি স্থানীয় শিকারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে না পেলে সাপ ব্যবসায়ী ও রেসকিউ করে এমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

সাপের খাবারএকেক ধরনের সাপ একেক ধরনের খাবার খায়। কিন্তু সব ধরনের সাপেরই প্রিয় খাবার ইঁদুর, পোকামাকড়, ডিম, পাখি, মাছ, টিকটিকি, ব্যাঙ। একটি সাপ গড়ে এক সময়ে প্রায় চারটি ইঁদুর খায়। আবার সাইজ অনুযায়ী খাবার কমবেশি হতে পারে। পাইথনের মতো বড় সাপের জন্য আবার প্রয়োজন হবে অনেক বেশি খাবারের।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাযদি সাপগুলো সব সময় খাঁচায় রাখেন তাহলে খাঁচা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খাঁচার ভেতরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে। এতে সাপের উৎপাদন বাড়বে কয়েকগুণ বেশি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সাপের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

বাজারজাতকরণএবার বাজারজাতকরণের পালা। এটি খুব কঠিন বিষয় নয়। বিশ্বজুড়ে এর একটি বড় বাজার রয়েছে। শুধু আপনাকে ক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিতে পারেন। এমন ফোরাম খুঁজে বের করতে হবে যেখানে ক্রেতারা পৃষ্ঠপোষকতা করে। সরাসরি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেও যোগাযোগ করতে পারেন।

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলোকেও টার্গেট করতে পারেন। এখন বেল্ট, জ্যাকেট, জুতা, ব্যাগ এবং আরও অনেক কিছু তৈরিতে সাপের চামড়া ব্যবহার করা হয়। তাদের কাছে একবার পৌঁছাতে পারলে আপনাকে আর এ নিয়ে ভাবতে হবে না। এছাড়াও বিশ্বের বড় বড় রেস্তোরাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেত পারেন। যারা সাপের তৈরি খাবার পরিবেশন করে।

সতর্কতাসাপের চাষ অত্যন্ত লাভজনক হলেও এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিশ্চিত করুন। কামড়ের প্রভাব কমাতে আপনার সাপের খামারে থাকাকালীন আপনি বুট এবং গ্লাভস পরুন। শিশুদের সাপের খামার থেকে দূরে রাখুন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের খামারে নিযুক্ত করুন।

সূত্র: মেকমানি

কেএসকে/এএসএ/এএসএম