বেসরকারি স্কুল কলেজে শিক্ষক নিয়োগ আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হচ্ছে। গত বুধবার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এখন থেকে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক পদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা থাকবে না। মেধার ভিত্তিতে এনটিআরসিএ এসব পদে নিয়োগ দেবে। এনটিআরসিএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র মতে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি বন্ধ ও মেধাবীদের শিক্ষককতা পেশায় আগ্রহ সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নেয় শিক্ষামন্ত্রণালয়। এজন্য গত ২২ অক্টোবর এনটিআরসিএ আইন সংশোধনের গেজেট প্রকাশ করে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধে ১১ নভেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে। এনটিআরসিএ’কে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) আদলে `বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন`-এ রূপান্তরিত করার জন্য দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে। এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর এক পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা জারি করে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। নতুন নিয়মে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের শূন্য পদের চাহিদাপত্র উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে। শিক্ষা কর্মকর্তা এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা একীভূত করে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে। জেলা কর্মকর্তা জেলার সব চাহিদা একীভূত করে এনটিআরসিএ`তে পাঠাবে। এনটিআরসিএ এই চাহিদার বিপরীতে পরীক্ষা নিয়ে পদ/বিষয়ভিত্তিক জাতীয়-বিভাগ-জেলা-উপজেলা/থানাওয়ারি মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফল ঘোষণা করবে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ওই মেধা তালিকার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেবে। মূলত এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষমতা খর্ব হলো। তবে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে এ নীতি প্রযোজ্য হবে না। নতুন নিয়ম অনুসারে নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি সরসরি নিয়োগ দিতো।এ বিষয়ে এনটিআরসিএ-এর পরিচালক তাহসিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পরিপত্র অনুসারে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গেলে প্রায় এক বছর সময় লেগে যাবে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হতে পারে। যেটা কারো কাম্য হতে পারে না। তাই অন্তবর্তীকালীন নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামী মাসে শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত (মাসিক বেতনের সরকারি অংশ পাওয়া) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৩টি। এর বাইরেও কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহী রহমান।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমদ জানান, নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত নিয়মকানুন জানিয়ে এনটিআরসিএ`র পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত ১২টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৬ লাখ প্রার্থী পাস করেছে। এরমধ্যে ৬৪ হাজার ৩২২ জন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।এনএম/জেএইচ/এমএস
Advertisement