লাইফস্টাইল

ভয়ংকর যে রোগে অবশ জাস্টিন বিবারের মুখ

কানাডিয়ান শিল্পী জাস্টিন বিবার ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মুখের একপাশ অবশ হয়ে গেছে। এমনকি চোখের পাতাও পড়ছে না তার। বিরল এই ব্যাধির নাম ‘রামসে হান্ট সিন্ড্রোম’। এই রোগে আক্রান্ত হলে কানের চারপাশে, মুখে বা মুখে যন্ত্রণাদায়ক ফুসকুড়ি বের হয়।

Advertisement

এই ব্যাধিতে আক্রান্তরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ভেরিসেলা জোস্টার নামক ভাইরাসই রামসে হান্ট সিন্ড্রোমের জন্য দায়ী। এই ভাইরাস মস্তিষ্কের একটি স্নায়ুকে সংক্রমিত করে। আর এ কারণে মুখের একপাশ অবশ হয়ে যায়। এই ভাইরাসই চিকেন পক্স ও শিঙ্গেলসের মতো রোগের কারণ।

যদিও রামসে হান্ট সিন্ড্রোম প্রাথমিকভাবে শতাক্ত করা গেলে ও দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে এর জটিলতার ঝুঁকি কমানো যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর স্থায়ীভাবে মুখের পেশি দুর্বলতা ও বধিরতা হতে পারে।

যদি স্নায়ুর খুব বেশি ক্ষতি না হয় তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। আর যদি ক্ষতি আরও গুরুতর হয়, তবে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

Advertisement

রামসে হান্ট সিন্ড্রোমের উপসর্গ কী কী?

>> কানে প্রচণ্ড ব্যথা>> আক্রান্ত স্নায়ুর পাশে আশপাশে র‌্যাশ বের হয়>> একপাশের কানে শ্রবণশক্তি কমে যায়। >> মাথা ঘোরা >> মাথা ঘোরানো বা নড়াচড়ার অনুভূতি কমে যাওয়া>> মুখের দুর্বল পাশ থেকে খাবার পড়ে যাওয়া।>> খাবারের স্বাদ না পাওয়া।

মুখের কোনো অংশে প্যারালাইসিস হলে ও ফুসকুড়ি দেখা দিলে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। যেমন- ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাসের জন্য রক্ত ও ত্বক পরীক্ষা, ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি, লুম্বার পাঙ্কচার (বিরল ক্ষেত্রে), মাথার এমআরআই, নার্ভ কনডাঙ্কশন ইত্যাদি।

রামসে হান্ট সিনড্রোম কেন হয়?

Advertisement

চিকেনপক্সে আক্রান্তদের মধ্যে বেশি দেখা দেয় এই রোগ। চিকেনপক্স থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভাইরাসটি শরীরে থেকে যায় ও পরে যে কোনো সময় তা সক্রিয় হয়ে দাদ, তরল ভরা ফোস্কাসহ একটি যন্ত্রণাদায়ক ফুসকুড়ির সৃষ্টি করে।

রামসে হান্ট সিন্ড্রোম হলো একটি শিঙ্গলস প্রাদুর্ভাব, যা কানের কাছে মুখের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে। ফলে মুখের আক্রান্ত পাশ অবশ হয়ে যায় ও শ্রবণশক্তি কমে যায়।

এই রোগে কাদের ঝুঁকি বেশি?

চিকেনপক্সে আক্রান্ত হওয়ার পর যে কারও রামসে হান্ট সিন্ড্রোম দেখা দিতে পারে। এটি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের গুরুতরভাবে প্রভাবিত করে।

আবার যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও গর্ভবতী, তারাও এই ব্যাধিতে ভুগতে পারেন দীর্ঘদিন। রামসে হান্ট সিন্ড্রোম শিশুদের মধ্যে বিরল। যদিও এই ব্যাধি সংক্রামক নয়, তবে সতর্ক থাকা জরুরি।

রামসে হান্ট সিন্ড্রোমের চিকিৎসা কি?

স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয় অনেক সময়, যেমন- প্রিডনিসোন। এটি শক্তিশালী অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগ। আবার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, যেমন- অ্যাসাইক্লোভির বা ভ্যালাসাইক্লোভির দেওয়া হয় অনেক সময়। অনেকের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড দিয়ে বা শক্তিশালী পেইনকিলার প্রয়োগ করা হয়।

মুখের দুর্বলতা থাকাকালীন চোখ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার পর কর্নিয়াতে আঘাত যাতে না লাগে, তার জন্য চোখের প্যাচ ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে চোখের লুব্রিকেন্ট ও দিনে টিয়ারড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতে চোখ শুকিয়ে না যায়।

রামসে হান্ট সিন্ড্রোম প্রতিরোধে করণীয়

শিশুদের নিয়মিতভাবে চিকেনপক্সের টিকা দিতে হবে। তাহলে চিকেনপক্স ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি কমবে। আবার ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য দাদের টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সূত্র: মায়োক্লিনিক

জেএমএস/এসইউ/জেআইএম