চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিখ্যাত দুর্লভ হলুদ ড্রাগনের চাষ করে সফল হয়েছেন সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে প্রথমবারেই এ সফলতা পেয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে আশপাশের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই নতুন জাতের ড্রাগন।
Advertisement
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহতলীতে সিনিয়র সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন ২০২০ সঙ্গে নিজেদের একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো। সেখানে একের পর এক পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফলের চাষ।
এরই মধ্যে ৪৯ জাতের ফলের চাষাবাদ করেছেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চেরি টমেটো, স্ট্রবেরি, বিভিন্ন জাতের আম ও লাল ড্রাগন। এবছর তার নতুন সংযোজন ড্রাগনের আরেকটি জাত বিশ্ববিখ্যাত আইসিসি গোল্ড বা ইজরায়েলি ড্রাগন। বাংলায় একে হলুদ ড্রাগন বলা হয়।
সারাবিশ্বে ড্রাগনের রং ও আকৃতি অনুযায়ী একাধিক জাত রয়েছে। যার মধ্যে হলুদ কাঁটাহীন এই ড্রাগন সারাবিশ্বে দুর্লভ জাত হিসেবে বিবেচিত। ড্রাগনের এই জাতটি ‘কুইন অব ড্রাগন’ নামেও পরিচিত। এরই মধ্যে হলুদ ড্রাগনের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ ও নতুন উদ্যোক্তারা এসে ভিড় করছেন ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। কেউ দেখতে, কেউ এই জাত সম্পর্কে জানতে, কেউবা চাষাবাদের ধারণা নিতে।
Advertisement
আলাপকালে উদ্যোক্তা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন দাবি করেন, হলুদ ড্রাগন একটি খুবই দুর্লভ জাতের ড্রাগন, যা বিশ্বে ‘কুইন অব ড্রাগন’ হিসেবে খ্যাত। বাজারে প্রচলিত হলুদ রঙের ড্রাগনের সঙ্গে এর মিল নেই। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। মিষ্টতা অনেক বেশি এবং রসালো। এর পুষ্টিগুণ অন্য সব ড্রাগনের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি বলেন, আইসিসি গোল্ড (হলুদ ড্রাগন) উচ্চ ফলনশীর ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক একটি জাত। বাংলাদেশে এই ফল চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন উদ্যোক্তারা যদি এই ফল চাষ করে তাহলে বাণিজ্যিকভাবে তারা লাভবান হবেন বলে তিনি দাবি করেন। এতে ড্রাগন চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত অন্যান্য ড্রাগন ৪০০ গ্রাম থেকে ৯০০ ওজনের হয়ে থাকে। তবে গাছের বয়স ৩ বছর ছাড়িয়ে গেলে আইসিস জাতের একেকটি ড্রাগন ১ কেজি ওজন ছাড়িয়ে যাবে। ড্রাগনের এই জাতটি ঠান্ডা তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় শীতকালেও ড্রাগনের চাষাবাদের মাধ্যমে ড্রাগনের ফলন ধরে রাখার আশা প্রকাশ করেন এই উদ্যোক্তা।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর ম্যানেজার সোহান চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মীরা বলেন, সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে আমরা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর চাষাবাদ করেছি। ড্রাগন গাছের পরিচর্যা একটু বেশি করতে হবে। তাহলে ভালো ফলন আসবে। গত তিন মাস সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এবং পরিশ্রম করেছি। যেমন কচুরিপানা দিয়ে রেখেছি, মাটি একত্রিত করে নিয়মিত পানি দিয়েছি। এছাড়াও মিলিবাগ পোকা, মাকড়সাসহ বিভিন্ন প্রকার পোকায় আক্রান্ত হয়। আমরা সবসময় সে বিষয়গুলো দেখে রেখেছি। তবে যখন গাছে এমন ফলন দেখতে পেয়েছি তখন আমাদের সব কষ্ট শেষ হয়ে গেছে। তারা জানান, বাণিজ্যিকভাবে এবছর ৬টি ভিন্ন জাতের ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে।
Advertisement
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে ঘুরতে আসা কাজী শাহাদাৎ বলেন, আমি এর আগে বেশ কয়েকবার লাল ড্রাগন খেয়েছি। আজকে এই হলুদ জাতের ড্রাগন খেলাম। তবে এর আগে অন্য ড্রাগনে আমি এত স্বাদ পাইনি। হলুদ ড্রাগন খেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি বিরল স্বাদের ড্রাগন। আজকে এখানে না আসলে হয়তো জানতেই পারতাম না এই জাতটি এতো সুস্বাদু।
এছাড়া রহিম বাদশা, মির্জা জাকির, ফারুক আহমেদ, তালহা জুবায়েরসহ বেশ কয়েকজন জানান, নতুন জাতের দুর্লভ হলুদ ড্রাগনের বাগানে এসে তারা অভিভূত। বাগানে এসেই মন ভালো যায়। কালার এবং স্বাদে অতুলনীয় এই জাত দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করবে তারা মনে করেন।
ইসহাক খান নামের এক উদ্যোক্তা জানান, আমি জানতে পারলাম এখানে ড্রাগনের সম্পূর্ণ নতুন একটি জাতের চাষাবাদ হয়েছে। তাও আবার হলুদ তাই দেখতে এসেছি। আমার বাড়িতে আমার ৪ শতাংশ জমি পড়ে আছে। যদি ভালো লাগে আমি নিজেও আবাদের চেষ্টা করব।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি এই ড্রাগন ফল বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। কৃষক ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই ড্রাগন আবাদ শুরু করেছেন। তবে এর মধ্যে হলুদ ড্রাগন এবার সাড়া ফেলেছে।
তিনি বলেন, চাঁদপুরে এই জাতটি জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে চাঁদপুরের কিছু কৃষক উদ্যোগী হয়ে বাগান করেছেন। আমি আশা করি এই ফলটি চাঁদপুর জেলায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করবে।
নজরুল ইসলাম আতিক/এমএমএফ/এমএস